সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়ামীলীগের প্রচার করলেই জেল
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সদ্য জারি করা ‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর আওতায় দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সকল ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, দলটির পক্ষে বা সমর্থনে কোনো প্রেস বিবৃতি, প্রচারণা, সভা-সমাবেশ, বক্তৃতা কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।অধ্যাদেশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সত্তার পক্ষে জনসমক্ষে কথা বলেন বা প্রচার চালান, তাহলে তার জন্য সর্বনিম্ন দুই বছর এবং সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড এবং আর্থিক জরিমানার বিধান রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে সংবাদমাধ্যম, গবেষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম আইনি ও নৈতিক দ্বিধা।
আইন বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “রাজনৈতিক দল একটি সাংবিধানিক সত্তা। যদি এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে সেটি নিয়ে আলোচনা, গবেষণা বা ইতিহাস রচনাও অপরাধের আওতায় পড়তে পারে।” তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার এই আইনের ফলে মারাত্মকভাবে খর্ব হতে পারে।”
এই আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্কিত ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান নিয়েও সরাসরি প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইতিহাস লিখতে হলেও “কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল” বলে উল্লেখ করার বিধান রাখা হয়েছে, অন্যথায় মামলার মুখে পড়তে হবে সংশ্লিষ্ট লেখক বা গবেষককে।
সরকারি বিবৃতিতে অবশ্য বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী নয় এবং এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সত্তার জন্য প্রযোজ্য। তবে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই নজির ভবিষ্যতে অন্য দল বা মতবাদকেও একইভাবে দমন করার পথে নিয়ে যেতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের রাজনীতিতে মতবিরোধ এবং বিরোধী কণ্ঠ দমন করার এক নতুন ধারা শুরু হলো। গণমাধ্যম, গবেষণা এবং ইতিহাসচর্চার ওপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে জনমনে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা ও উদ্বেগ।
মতামত দিন