জনতার জিয়া: দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও রাজনৈতিক দর্শন
অধ্যাপক সরওয়ার জাহান ভূঁইয়া দোলন: বাংলাদেশের ইতিহাসে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারিত হয় এক অনন্য রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। তিনি কেবল সেনাপ্রধান বা রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সংগঠক, দেশপ্রেমিক এবং স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রতিটি ধাপে যিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন দেশের জন্য।১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার বাগবাড়ী গ্রামে জন্ম নেওয়া ছোট্ট শিশু কমলই পরে হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের জনতার জিয়া। শিক্ষাজীবনে করাচি থেকে শুরু করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শন, আর পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণা—সবই তাকে ইতিহাসের অমর পাতায় স্থায়ী আসন দিয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে জিয়া শুধু সেনানায়ক নন, একজন দূরদর্শী রাজনৈতিক চিন্তাবিদ হিসেবেও আবির্ভূত হন। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর যখন দেশ একদলীয় শাসনব্যবস্থায় দমবন্ধ হয়ে পড়ছিল, তখন তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন করেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন, রাজনীতিতে মতপ্রকাশের বহুমাত্রিক সুযোগ সৃষ্টি করেন। এভাবেই তিনি গণতন্ত্রকে পুনর্জীবিত করেন।
তার চারটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি—শিক্ষা বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব, কৃষি বিপ্লব ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ—আজও উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য প্রাসঙ্গিক। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, একটি দেশের শক্তি নিহিত থাকে তার জনগণ ও সম্পদে। সেই কারণেই তিনি উৎপাদনমুখী রাজনীতিকে সামনে এনেছিলেন এবং বলেছিলেন, “প্রশিক্ষিত কর্মীই রাজনীতির প্রাণ।” এ নীতি অনুসরণ করে তিনি দলীয় কর্মী থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত সবার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন।
শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ”। তার নেতৃত্বে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এ জাতীয়তাবাদ একদিকে জাতীয় পরিচয়কে সুদৃঢ় করেছিল, অন্যদিকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও প্রভাব ফেলেছিল। সার্ক গঠনে তার অবদান, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ভূমিকা এবং সৌদি আরবের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন প্রমাণ করে তিনি ছিলেন দূরদর্শী কূটনীতিক।
তবে সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিল মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা। গ্রামের সাধারণ মানুষের সাথে একাকার হয়ে যেতেন তিনি। কৃষকের কুঁড়েঘরে বসে খাওয়া, মজুরদের সাথে মাটির বাসনে ভাত ভাগ করা, বা সাধারণ মানুষের সাথে মাইলের পর মাইল হেঁটে যাওয়া—এসব দৃশ্য তাকে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে অমর করে তুলেছে। তাই মৃত্যুর পরও কোটি মানুষ তাকে স্মরণ করে।
শহীদ জিয়া বিশ্বাস করতেন, স্বাধীনতা কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়; প্রকৃত স্বাধীনতা হলো অর্থনৈতিক মুক্তি, শিক্ষা ও আত্মনির্ভরশীলতা। তার স্বপ্ন ছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যা আত্মমর্যাদায় দাঁড়াবে মাথা উঁচু করে। বর্তমান সময়ে যখন দেশ রাজনৈতিক সংকট, দুর্নীতি ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি, তখন জিয়ার দর্শন ও নীতি আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়—কিভাবে একটি উৎপাদনমুখী, গণতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়।
আজ তার সুযোগ্য উত্তরসূরি তারেক রহমান “৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি” নিয়ে কাজ করছেন, যা জিয়ার চিন্তাধারারই সম্প্রসারণ। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, শহীদ জিয়ার স্বপ্ন আজও বেঁচে আছে, তার দর্শন এখনও প্রাসঙ্গিক।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন জনতার নেতা, একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, যিনি মানুষের ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন। তাই তাকে আজও কোটি মানুষ শ্রদ্ধা করে, মনে রাখে “জনতার জিয়া” হিসেবে।
লেখক: সাবেক যুগ্ন আহবায়ক
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি
সদস্য সচিব, মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি
যুগ্ন মহাসচিব, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষ সমিতি (বাকশিস)
কেন্দ্রীয় কমিটি
মতামত দিন