ভ্রমণ

শ্রীমঙ্গলে পাহাড়ি ঝর্ণা আর গুহার মাঝে রোমাঞ্চ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ॥ শ্রীমঙ্গলের সিন্দুরখান ইউনিয়নের নাহার চা-বাগানের খাসিয়া পুঞ্জির গভীর পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত লাসুবন গিরিখাত পর্যটকদের মধ্যে নতুন আকর্ষণ তৈরি করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়ি ঝর্ণা এবং দুঃসাহসিক অভিযানের কারণে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

গিরিখাতটির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার থেকে শুরু হয়ে ভারতের ত্রিপুরা পর্যন্ত বিস্তৃত। স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা অনুযায়ী নামকরণ করা লাসুবন, ক্রেম উল্কা ও ক্রেম কেরি গিরিখাতগুলো প্রাকৃতিক পাথুরে ছড়া এবং ঝিরি নিয়ে গঠিত। শুষ্ক মৌসুমে এগুলোতে ভ্রমণ নিরাপদ হলেও বর্ষায় স্রোতের পানি বিপদজনক হয়ে ওঠে। এছাড়া খাড়া পাথরের দেয়াল পা পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করে।

গিরিখাতের চারপাশে রয়েছে ছোট জলপ্রপাত, পাহাড়ি ঝর্ণা ও গভীর গুহা। এসব বৈশিষ্ট্য পর্যটকদের জন্য এক অনন্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা প্রদান করে। স্থানীয়রা জানান, প্রাচীন এই গিরিখাতসমূহ প্রাকৃতিক ক্ষয়প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হাজার বছরের অভিজ্ঞতায় গঠিত।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইসলাম উদ্দিন সম্প্রতি গিরিখাত পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসক ফেসবুকে পোস্টে পর্যটকদের জন্য গিরিখাত ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন নিরাপত্তা ও ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে পর্যটকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করছে।

লাসুবন গিরিখাতের কাছে পৌঁছাতে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে জিপ বা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে সিন্দুরখান যেতে হয়। তারপর হরিণছড়া চা-বাগানের কাছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গিরিখাতের পথ খুঁজে নেওয়া যায়। পুরো পথ পাহাড়ি ছড়া ও টিলাবেষ্টিত। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাস করেন খাসিয়া ও চা বাগানের শ্রমিকরা।

পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত হলে এই গিরিখাতগুলো শ্রীমঙ্গলের পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। স্থানীয়রা বলছেন, যথাযথ সংরক্ষণ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে লাসুবন ও অন্যান্য প্রাচীন গিরিখাত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

লাসুবন গিরিখাতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়ি ঝর্ণা ও দুর্গম পথশৃঙ্খলা প্রতিটি পর্যটকের জন্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হিসেবে মনোযোগ আকর্ষণ করছে। এটি শ্রীমঙ্গলের পর্যটন খাতের জন্য এক সম্ভাবনাময় নতুন গন্তব্য।

মতামত দিন