লোকসানের বোঝা, পেশা ছাড়ার পথে রাঙ্গাবালীর খামারিরা
পটুয়াখালী প্রতিনিধি ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় গরু ও মহিষ পালনের ঐতিহ্য রয়েছে বহু পুরনো। চরাঞ্চলের প্রাকৃতিক ঘাস আর নদী-নালার পরিবেশ গবাদিপশু পালনের জন্য এ অঞ্চলকে করেছে বিশেষ উপযোগী। তবে চলতি বছর বাজারমূল্যের ধস সেই ঐতিহ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের বর্গা খামারি মো. নিশির ফকির জানান, “আমি তিনটি গরু এক লাখ বিশ হাজার টাকায় এনেছিলাম। শর্ত ছিল লাভ হলে অর্ধেক মালিক পাবে আর অর্ধেক আমি পাব। কিন্তু এক বছর লালন-পালনের পর দেখা গেল বিক্রয়মূল্য কেনার দামের চেয়েও কম। ফলে মালিককে গরু ফেরত দিয়েছি। এতে আমার খাওয়ানো-চিকিৎসা বাবদ লোকসান হলো।”
তিনি আরও বলেন, “এভাবে দাম কমতে থাকলে আর কেউ গরু লালন-পালনে আগ্রহী হবে না। আমরা খামারিরা হতাশ হয়ে যাচ্ছি।”
খামারিরা অভিযোগ করেছেন, গরুর প্রকৃত দাম না পেয়ে হাট থেকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। অন্যদিকে প্রত্যন্ত রাঙ্গাবালী থেকে পশু পরিবহনে খরচও অনেক বেশি। ফলে লোকসান প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
এদিকে খামারিদের লোকসান স্থানীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। পশুপালন নির্ভর পরিবারগুলো চরম আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। যেসব খামারিরা ঋণ নিয়ে পশু কিনেছিলেন, তারা এখন দ্বিগুণ সমস্যায় পড়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, “খামারিদের আমরা বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তবে গবাদিপশুর বাজারমূল্য নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ জাতীয় পর্যায়ের বিষয়। সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া এ সংকট থেকে বের হওয়া কঠিন।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, খামারিদের টিকিয়ে রাখতে হলে পশু ক্রয়ে সরকারিভাবে ভর্তুকি কিংবা ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। নইলে একসময় রাঙ্গাবালীর গবাদিপশু খাত মুখ থুবড়ে পড়বে, যা কৃষক ও খামারি উভয়ের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে।
মতামত দিন