জেলার খবর

বৈদেশিক মুদ্রা আসছে মৌলভীবাজারের ঝালের রাজা নাগা মরিচে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ॥ বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচগুলোর একটি নাগা মরিচ। ২০০৭ সালে গিনেস বুকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই মরিচ। ইংরেজিতে এর নাম কোবরা চিলি এবং বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাপসিকাম চিনেনসি। বাংলাদেশে বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে এটি ‘নাগা মরিচ’, ‘বোম্বাই মরিচ’, ‘ফোটকা মরিচ’ কিংবা ‘কামরাঙা মরিচ’ নামে পরিচিত।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বর্তমানে নাগা মরিচ একটি লাভজনক বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। স্থানীয় কৃষি দপ্তর জানায়, এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও টিলার জমি নাগা মরিচ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। শীত ও গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমেই চাষ সম্ভব হওয়ায় কৃষকরা দ্বিগুণ উৎপাদন পাচ্ছেন।

কৃষক আহসান হাবিব বলেন, তিনি ১০ কেয়ার জমিতে ২ হাজার গাছ রোপণ করেছেন। এক মৌসুমেই ৫-৬ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন। আরেক কৃষক জানান, নাগা মরিচের চাষে যত্ন ও পরিচর্যা বেশি লাগে। তবে সঠিকভাবে করলে গাছপ্রতি ২০০-৪০০টি মরিচ পাওয়া যায়। বাজারে একেকটি মরিচের দাম ৩ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করে।

শ্রীমঙ্গলের আড়তদার হাসেম আলী বলেন, মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকার নাগা মরিচ বিক্রি হয়। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হয়। বিদেশে বসবাসরত সিলেটিদের কাছে নাগা মরিচের আচার বিশেষ জনপ্রিয়।

আড়তদার আবু তাহের জানান, নাগা মরিচ চাষে আলাদা বড় খরচ লাগে না। বিশেষ করে লেবুগাছের নিচে এটি চাষ করলে বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে কৃষকরা কম খরচে বেশি লাভবান হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রীমঙ্গলের প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে নাগা মরিচ মিশ্র আবাদে উৎপাদিত হচ্ছে। হেক্টরপ্রতি গড়ে ৩ টন উৎপাদন হয়। এ উৎপাদন স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও সুযোগ তৈরি করছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, নাগা মরিচের আবাদ বাড়ানো গেলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। স্থানীয় কৃষকদের আরও উৎসাহিত করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নাগা মরিচ কেবল শ্রীমঙ্গলের কৃষকদের নয়, দেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা ও বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নাগা মরিচ হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ফসল।

মতামত দিন