পদ্মার ঢেউ ছুঁয়ে জীবনের পথে রাখালগাছি
রাজবাড়ী প্রতিনিধি ॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বেতকা ও রাখালগাছি এলাকার মানুষের জীবনে নৌকা শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, বরং প্রতিদিনের জীবনধারার অংশ। পদ্মা নদীর দুপারে অবস্থিত ১০টি গ্রামের মানুষের জন্য নৌকা ছাড়া বিকল্প কোনো পরিবহন নেই। প্রতিদিন অন্তারমোড় থেকে বেতকা-রাখালগাছি রুটে দুই থেকে তিন হাজার যাত্রী পারাপার হয়।বর্ষাকালে নৌপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার, শুষ্ক মৌসুমে কমে দাঁড়ায় ২০ কিলোমিটার। সময়ের হিসাবে বর্ষায় নদী পাড়ি দিতে লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা, আর শুষ্ক মৌসুমে লাগে ৪০ মিনিট। নৌপথের যাত্রা যতটা প্রয়োজনীয়, ততটাই ঝুঁকিপূর্ণ—বিশেষ করে বর্ষায় উত্তাল পদ্মা পার হওয়া।
স্থানীয় খেয়াঘাট ইজারাদারদের পরিচালনায় ১২টি বড় ইঞ্জিনচালিত ট্রলার চলাচল করে। প্রতিটি গ্রুপে ৪-৬টি নৌকা নির্ধারিত থাকে এবং যাত্রীভাড়া ভাগ করে নেওয়া হয়। নৌকাচালক ইছাক শেখ জানান, প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রিপ দেওয়া হয়। তবে ঝড়বৃষ্টি বা রাতের জরুরি চিকিৎসার সময় নৌকা চালাতে গিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।
যাত্রীসুবিধা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বহুদিনের। অন্তারমোড় ঘাটে যাত্রীদের বসার বা আশ্রয়ের জায়গা নেই। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে বাজার থেকে ঘাট পর্যন্ত অটোরিকশা ও ভ্যান একসঙ্গে চলাচল করতে পারে না। ইজারাদারের প্রতিনিধি আনোয়ার জানান, যাত্রীদের জন্য একটি যাত্রীছাউনি এবং রাস্তা সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদুর রহমান জানান, রাখালগাছি থেকে পাবনার ঢালারচর রেলস্টেশন পর্যন্ত পাকা সড়ক ইতিমধ্যেই হয়েছে। নদীর পাড় পর্যন্ত অবশিষ্ট ৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজও প্রায় শেষের পথে। অন্তারমোড় থেকে বেতকা পর্যন্ত সেতু হলে রাজবাড়ী ও পাবনা জেলার মানুষের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।
স্থানীয়দের প্রত্যাশা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও যাত্রীসুবিধা বাড়ালে এই রুটের যাতায়াত হবে আরও নিরাপদ, আর নদীপথের ওপর নির্ভরশীল এই জনপদের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হবে।
মতামত দিন