শেখ হাসিনার পতনের দলিল প্রকাশ ৫ আগস্ট, যা আছে ...
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এর খসড়া প্রস্তুত করে তা বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে পাঠিয়েছে। ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি, সংবিধান সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের রূপরেখা এই ঘোষণায় উঠে এসেছে।ঘোষণাপত্রটি ২৬ দফার মাধ্যমে জনগণের দীর্ঘদিনের আন্দোলন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পটভূমি তুলে ধরেছে। এটিকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী দলিল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
এ ঘোষণাপত্রে বলা হয়, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক, ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়েছে।”
বিএনপি, এনসিপি এবং জামায়াত এই দলিলের খসড়ায় ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছে। বিএনপি চায়, সংবিধানের প্রস্তাবনায় পুরো দলিল যুক্ত না করে অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি হিসেবে একটি অনুচ্ছেদ রাখা হোক। কিন্তু এনসিপি এবং জামায়াত পুরো দলিল সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে।
সরকার বলেছে, এই ঘোষণাপত্র গোপনীয়তার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে যেন কোনো রকম রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি না হয়। খসড়ায় শুরুতে ‘ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে’ বলা হলেও পরে সংশোধন করে বলা হয়েছে ‘ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অভ্যুত্থান হয়েছে’—এটি নিয়ে নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চলছে।
এ ঘোষণাপত্রটি ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবেন বলে জানা গেছে। ড. ইউনূস অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঘোষণাপত্রের সূত্রপাত হয় ১/১১ পরবর্তী সময় এবং শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতার সমালোচনা দিয়ে। এতে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোকে ‘প্রহসন’ বলা হয়েছে এবং জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
এতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ঘটনাকে কেন্দ্রীয়ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে সামরিক বাহিনীও জনগণের পক্ষে অবস্থান নেয়।
ঘোষণায় দাবি করা হয়, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে মানুষ লড়াই করে, যেখানে নারী-শিশুসহ দুই হাজার মানুষ নিহত এবং অসংখ্য আহত হয়েছে। এ অবস্থায় জনগণকে সম্পৃক্ত করে নতুন সরকার গঠন একটি যৌক্তিক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রাজনৈতিক পথ।
ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে এবং সংবিধানের কাঠামোগত সংস্কার ঘটবে। এতে অর্থনৈতিক দুর্নীতি রোধ এবং সামাজিক বৈষম্য বিলুপ্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
মতামত দিন