পানি চুক্তিতে পরিবর্তন চায় ভারত, উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক চুক্তির মেয়াদ আগামী বছর (২০২৬) শেষ হতে যাচ্ছে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বলবৎ থাকা এই চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃদেশীয় পানিবণ্টনের অন্যতম উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হলেও, মেয়াদ শেষে এটি নবায়ন হবে নাকি পরিবর্তন আনা হবে—তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার নতুন দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইকোনোমিক টাইমস–এর একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দিল্লি এখন গঙ্গা পানি চুক্তির সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং এটি পুনঃমূল্যায়নের মাধ্যমে নতুন কাঠামোতে চুক্তি করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদী চুক্তি নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পটভূমিতে, ভারতের এই অবস্থান আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশ একটি নির্দিষ্ট হারে গঙ্গার পানি পেয়ে থাকে। তবে ভারত দাবি করছে, কৃষি, শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তারা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক অতিরিক্ত পানি সরবরাহের প্রয়োজন অনুভব করছে। এই যুক্তি সামনে রেখে তারা মনে করছে, বর্তমান চুক্তি সময়োপযোগী নয় এবং নতুন বাস্তবতায় এটি পর্যালোচনা করা উচিত।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে খরার সময় গঙ্গা থেকে পর্যাপ্ত পানি পায় না, ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি, পানীয় জল ও পরিবেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ফারাক্কা বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে ঢাকা দাবি করে থাকে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এই নতুন চুক্তির বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে একমত হয়েছে। তারা বলছে, পুরনো চুক্তির আওতায় রাজ্যের পানি চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না, ফলে তাদের বাড়তি পানি বরাদ্দ প্রয়োজন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়ায় দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাস, পারস্পরিক স্বার্থ এবং আন্তরিকতা অপরিহার্য। কূটনৈতিক সংলাপ এবং বৈজ্ঞানিক পানিবণ্টন পদ্ধতির মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি না হলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে।
মতামত দিন