জাতীয়

দেশে এক বছরে বন্ধ ২৩৯ শিল্প কারখানা, দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২৭ শতাংশ

ডেস্ক রিপোর্ট ॥ দেশে শিল্প খাতে বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। গত এক বছরে ২৩৯টি শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এক লাখ এক হাজার ৮৯৩ জন শ্রমিক তাদের কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া এসব শ্রমিকের অনেকেই এখনো নতুন কোনো চাকরি পাননি। ফলে বিপাকে পড়েছে তাদের পরিবার।

শিল্পাঞ্চল পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এই বিপুল সংখ্যক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এর ফলে শুধু শিল্প খাতেই নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বন্ধ কারখানার মধ্যে একটি আস-সুবাহ নিটওয়্যার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মঞ্জুরুল ইসলাম জয় জানান, দীর্ঘদিন চাকরি করার সুবাদে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছিলেন। সেই টাকায় সংসার চালালেও পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। তার ভাষায়, “আমার মাসিক খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা। দুই মাস ধরে কোনো আয় নেই। সঞ্চয় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এরপর হয়তো বিকল্প পথ খুঁজতে হবে—সেটা ভালো হোক বা খারাপ।”

তিনি আরও দাবি করেন, কর্মসংস্থান সংকটের কারণে সমাজে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের প্রবণতা বাড়ছে। অনেকেই ভাড়া পরিশোধ করতে না পেরে বা দোকানের বাকি মেটাতে না পেরে গ্রামে ফিরে গেছেন।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতি দেশের দারিদ্র্য বাড়িয়ে তুলছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৮০ শতাংশ পরিবারের খরচ আয়ের চেয়ে বেশি। তাদের হিসাবে, দেশের দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে, যা ২০২২ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা তিন বছর আগে ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের তথ্যও এ অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। তবে পিপিআরসির সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং অতি দারিদ্র্যের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, শিল্প খাতে স্থবিরতা ও কর্মসংস্থানের সংকট মোকাবিলায় জরুরি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। নইলে দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, যা দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

মতামত দিন