গুমের নির্মম কাহিনি জাতিকে জানাতে চান প্রধান উপদেষ্টা
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ গুম সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন হাতে পেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তা শুধু ওয়েবসাইটেই নয়, বই আকারেও প্রকাশের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, গুমের ভয়াবহ ও নির্মম কাহিনিগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছানো জরুরি, যাতে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে।মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গুম কমিশনের প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “একেকটি ঘটনা যেন বাস্তব হরর কাহিনি। সমাজের পরিচিত ও ভদ্রবেশী মানুষেরাই এসব অমানবিকতার সঙ্গে জড়িত, যা বিস্ময় ও দুঃখজনক।”
ড. ইউনূস জানান, তিন ফিট বাই তিন ফিটের ছোট ঘরে মাসের পর মাস আটকে রাখার যেসব তথ্য এসেছে, তা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের উদাহরণ। এই অভিজ্ঞতা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা জরুরি। তিনি একটি “হরর মিউজিয়াম” গড়ে তোলার প্রস্তাবও দেন, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানে, অতীতে কী অন্ধকার অধ্যায় রচিত হয়েছিল।
কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিন শতাধিক নিখোঁজ ব্যক্তির এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জনের অনুপস্থিতির কারণে ব্যাংকিং, সম্পত্তি হস্তান্তরসহ নানা আইনি জটিলতায় পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কমিশনের প্রধান ব্যাংক ও আইন সংশ্লিষ্ট নিয়মাবলি সহজীকরণের পরামর্শ দিয়েছেন।
কমিশন আরও জানিয়েছে, গুম সংক্রান্ত মোট ১৮৫০টি অভিযোগের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৩৫০টি যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা ৩৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে কমিশনের একজন সদস্য জানান, কিছু জড়িত কর্মকর্তা অনুশোচনা থেকে লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন এবং তাদের সেই চিঠি গণভবনে জমা হয়েছে। তৎকালীন সেনাপ্রধান জনসম্মুখে এ চিঠির সত্যতা স্বীকার করেছেন, যা তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
প্রতিবেদন জমা উপলক্ষে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং গুম কমিশনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। ড. ইউনূস তাদের সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেন, “হুমকি ও ভয়ের মধ্যেও আপনারা মানবাধিকারের পক্ষে যে অবস্থান নিয়েছেন, তা ইতিহাসে স্থান পাবে।”
মতামত দিন