সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস দমন করবে ভারত: জয়শঙ্করের হুঁশিয়ারি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর এবং প্রত্যক্ষ পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সন্ত্রাসীরা যেখানেই থাকুক, আমরা সেখানে গিয়ে আঘাত করব—প্রয়োজনে সীমান্ত পেরিয়েও।”এই কঠোর বার্তার পেছনে রয়েছে ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে সংঘটিত এক নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা, যেখানে প্রাণ হারান ২৬ জন হিন্দু পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী, যা পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা হিসেবে পরিচিত। এই হামলার পর ভারত কূটনৈতিকভাবে কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়, পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত, ভিসা বাতিলসহ একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ভারতের আকাশসীমা বন্ধ করে ও ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
উত্তেজনার মাঝেই ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায়, যাতে ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে দাবি করে নয়াদিল্লি। পাকিস্তান অবশ্য এ সংখ্যাকে অতিরঞ্জিত বলে দাবি করে এবং অভিযানে সেনা ও সাধারণ নাগরিক হতাহতের তথ্য জানায়। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ৯ মে পাকিস্তান চালায় ‘অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস’, যা সরাসরি ভারতীয় ভূখণ্ডে আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযানের প্রেক্ষিতে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, উপমহাদেশে উত্তেজনা এখনও প্রশমিত হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে, ভারত এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শক্ত জনমত গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে। ইউরোপ সফরের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের ভূমিকার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান তুলে ধরেন। তার বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে ভারতের প্রতিরক্ষা নীতির পরিবর্তন—আর তা হলো, “আঘাত এলে জবাব সীমান্তের মধ্যে আটকে থাকবে না।”
এই অবস্থান স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই কেবল সামরিক নয়, বরং কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন মাত্রা লাভ করছে। সীমান্ত উত্তেজনা ও সন্ত্রাসবাদ দমন—এই দুই চ্যালেঞ্জ এখন উপমহাদেশের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মোড় তৈরি করেছে।
মতামত দিন