যুদ্ধের মাঝেই উত্তরসূরি নির্ধারণ, খামেনির চমক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ চলমান যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নিজের অনুপস্থিতি বা সম্ভাব্য হত্যাচেষ্টার শঙ্কা থেকে আগাম ব্যবস্থা নিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানিয়েছে, খামেনি ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনজন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতার নাম জমা দিয়েছেন অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টসের কাছে।এই সংস্থাটি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মনোনয়ন ও পরিবর্তন প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকে। তবে সাধারণত এই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি ও গোপনীয় হলেও, চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং ইসরায়েল-মার্কিন হুমকির প্রেক্ষাপটে খামেনি এবার অপ্রত্যাশিতভাবে আগেভাগেই উত্তরাধিকার নির্ধারণের পদক্ষেপ নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইরানি কর্মকর্তার বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খামেনির প্রস্তাবিত উত্তরসূরি তালিকায় তার পুত্র মুজতবা খামেনির নাম নেই। এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যাতে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ বা ধর্মীয় নেতৃত্বে পক্ষপাতের সমালোচনা এড়ানো যায়।
বর্তমানে ইরান এক ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এ প্রাণ হারিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় সামরিক ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা। ইরানও পাল্টা হামলায় ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ চালিয়ে ইসরায়েলে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানছে। দুই দেশের মধ্যে সহিংসতা যেন থামার কোনো লক্ষণই দেখাচ্ছে না।
এই প্রেক্ষাপটে, খামেনির নেওয়া পদক্ষেপকে অনেকেই দেখছেন ‘নেতৃত্বের শূন্যতা রোধের কৌশল’ হিসেবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উত্তরসূরি নির্বাচন ইরানের ভবিষ্যৎ কূটনীতি, প্রতিরক্ষা নীতি ও মধ্যপ্রাচ্যের সমীকরণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
আঞ্চলিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, খামেনি চাচ্ছেন যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও যেন দেশ অভ্যন্তরীণভাবে নেতৃত্বহীন না হয়ে পড়ে। এই পদক্ষেপ একটি বার্তা বহন করে—ইরান যুদ্ধে থাকলেও তারা নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায়।
অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টসের সদস্যরা এখন সেই তিন প্রার্থীর মধ্য থেকে পরবর্তী নেতা নির্ধারণে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবুও রাজনৈতিক অঙ্গনে এই পদক্ষেপ একটি বড় মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মতামত দিন