আন্তর্জাতিক

ভারতে যৌথবাহিনীর অভিযানে এক হাজার বাংলাদেশি আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ ও সুরাট শহরে পরিচালিত এক বিশাল অভিযানে এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতভর যৌথ বাহিনীর এই অভিযানে পুরুষ, নারী ও শিশুসহ বিপুলসংখ্যক অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ এবং বার্তাসংস্থা পিটিআই’র খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গুজরাট রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভির নির্দেশে এই অভিযান শুরু হয়। আহমেদাবাদ শহর থেকে প্রায় ৮৯০ জন এবং সুরাট শহর থেকে আরও ১৩৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। এই অভিযানকে রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিবাসনবিরোধী অভিযান হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে একটি নজিরবিহীন পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভি জানান, গুজরাটে অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের দ্রুত আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করবে না, তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রেফতার করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। একইসঙ্গে অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেন তিনি।

সুরাট পুলিশের যুগ্ম কমিশনার রঘবেন্দ্র ভাটস জানান, এই অভিযান রাজ্য পুলিশ, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়েছে। তিনি বলেন, “অভিযানটি অত্যন্ত সফল হয়েছে। বর্তমানে আটক ব্যক্তিদের পরিচয় যাচাই এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাচাই শেষ হলে দ্রুত তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

গুজরাট সরকার জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযান ভবিষ্যতেও চলবে। সরকারের কড়া বার্তা, যেকোনো ধরনের অবৈধ অভিবাসন বা তাতে সহযোগিতা বরদাস্ত করা হবে না। যারা অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয়, কাজ বা সহযোগিতা দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

এই অভিযান রাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এত বড় পরিসরে সমন্বিতভাবে অভিযান পরিচালনা করার ঘটনা বিরল, যা ভবিষ্যতে ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও এ ধরনের অভিযান চালানোর পথ দেখাতে পারে।

তবে এ নিয়ে গুজরাটের জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ সরকারের কড়া অবস্থানের প্রশংসা করলেও, অনেকেই মানবিক বিবেচনার তাগিদ দিয়েছেন। তাদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত অভিবাসীদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতি থাকা উচিত।

তবে সরকার বলছে, পুরো প্রক্রিয়া আইনি কাঠামোর মধ্যেই পরিচালিত হচ্ছে এবং কারও অধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ নেই। আটককৃতদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতিও অনুসরণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশি অভিবাসীদের এই গণগ্রেফতার এবং ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ ভারত-বাংলাদেশ অভিবাসন নীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মতামত দিন