পাক-ভারত যুদ্ধপ্রস্তুতি: ভারতের পাশে থাকার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক চরম উত্তেজনায় পৌঁছেছে। হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া, সামরিক পদক্ষেপ এবং কূটনৈতিক দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধপরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যভাবে ভারতের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে, অন্যদিকে পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়ে মাঠে নেমেছে চীন।কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর টানা সাতদিন গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে। পাল্টাপাল্টি হামলার পাশাপাশি সীমান্তে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক মহড়া জোরদার করা হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী কামান, ট্যাংক ও সরাসরি গুলিবর্ষণের মাধ্যমে যুদ্ধের মহড়া চালিয়েছে, যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে।
এ অবস্থায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির তিন বাহিনীকে যে কোনো ধরনের সামরিক অভিযানের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। একই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। মোদি বলেন, “সময় এসেছে সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থল সম্পূর্ণ ধ্বংস করার।”
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’-কে সমর্থন জানিয়ে সরাসরি পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে ফোনালাপে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানান, যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভারতের অবস্থানকে পূর্ণ সমর্থন করে। এ সময় ভারত পেহেলগাম হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনে।
চলমান উত্তেজনায় আন্তর্জাতিক কূটনীতিও সরব হয়েছে। চীন, পাকিস্তানের ঐতিহ্যগত মিত্র হিসেবে, প্রকাশ্যে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছে, বেইজিং সব পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদের পাশে থাকবে। তবে একই সঙ্গে তারা শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, পেহেলগাম হামলার পর ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে। জবাবে পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিত করে আকাশসীমা ও বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সিন্ধু দিয়ে পানি বইবে, না হয় রক্ত।”
সবমিলিয়ে, দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চরম উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ভারত, পাকিস্তান ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পাশাপাশি সামরিক প্রস্তুতি অঞ্চলজুড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মতামত দিন