থাইল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী পেতোংতার্ন অপসারিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে এক নাটকীয় মোড় এনে দেশটির সাংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রী পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার ঘোষিত আদালতের এ রায় কার্যত তার রাজনৈতিক জীবনে বড় ধাক্কা বয়ে এনেছে। গত বছরের আগস্টে শপথ নেওয়ার পর মাত্র এক বছরেই ক্ষমতা হারিয়ে থাই রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি।পেতোংতার্ন ছিলেন প্রভাবশালী সিনাওয়াত্রা পরিবারের সদস্য এবং দেশের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। তাই তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও বড় প্রভাব ফেলেছে। আদালতের এ রায়ের পেছনে মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে তার ফাঁস হওয়া ফোনকল। কলটিতে তাকে হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ সম্বোধন করতে এবং থাই সেনাদের সমালোচনা করতে শোনা যায়। তিনি অভিযোগ করেন, থাই সেনাদের কারণে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়েছেন। এতে দেশের ভেতরে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ফোনকল প্রকাশ্যে আসার পর থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এমনকি দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষও ঘটে, যা শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় থেমে যায়। কলটির আরেক অংশে পেতোংতার্নকে বলতে শোনা যায়, “যে কোনো কিছু চাইলে, আমাকে বলবেন। আমি বিষয়টি দেখব।” এই বক্তব্য বিরোধী দলের অভিযোগকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। ফলে রাজনৈতিক চাপ ও জনমত ক্রমেই তার বিরুদ্ধে যায়।
জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো ফোনকলকে দেশবিরোধী মন্তব্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করে। আদালতও বিষয়টিকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী হিসেবে রায় দিয়ে চলতি বছরের ১ জুলাই তার দায়িত্ব স্থগিত করে। শুক্রবারের চূড়ান্ত রায়ে তাকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
যদিও তিনি ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন, তার বক্তব্যগুলো কৌশলগত ছিল এবং সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছিল; তবু আদালত তা মেনে নেয়নি।
প্রধানমন্ত্রীত্ব হারালেও তিনি সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় ছিলেন। তবে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় তার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দেশটিতে দ্রুত নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ঘটনাকে থাইল্যান্ডের রাজনীতির জন্য বড় ধরনের মোড়বদল হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষত সিনাওয়াত্রা পরিবারের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রায় দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
মতামত দিন