আন্তর্জাতিক

ইরানের সিদ্ধান্তে মার্কিন প্রশাসনের ঘুম উড়ে গেছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ ইরানের পার্লামেন্ট বিশ্ব অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো একটি সিদ্ধান্তের পক্ষে ভোট দিয়েছে। মার্কিন আগ্রাসনের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়ে তারা একমত হয়েছে। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে দেশটির সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, তবে এই ভোট ইঙ্গিত দেয় যে ইরান এবার কৌশলগত প্রতিরোধের পথে এগোচ্ছে। ইরানের জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা ইসমাইল কাওসারি স্পষ্টভাবে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন এবং আন্তর্জাতিক মহলের নিরবতা এই সিদ্ধান্তের মূল প্রেক্ষাপট।

হরমুজ প্রণালী বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি পরিবহন পথ। বিশ্বের মোট অপরিশোধিত তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই জলপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। পারস্য উপসাগরের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো—সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের তেল ও গ্যাস রপ্তানির জন্য এই পথ ব্যবহার করে। বিশেষ করে কাতার এখান থেকেই এলএনজি রপ্তানি করে। এই প্রণালী বন্ধ হলে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে তাৎক্ষণিক বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে।

বিশ্লেষকরা পূর্বেই সতর্ক করেছিলেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে মাত্র এক সপ্তাহেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। বিকল্প রুট থাকলেও তা ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং সক্ষমতার দিক থেকেও সীমাবদ্ধ। ফলে এই সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে তুলতে পারে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রেস টিভি জানায়, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর ফলে ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে উত্তেজনা তৈরি হয় এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে হরমুজ প্রণালী বন্ধের চিন্তা সামনে আসে। দেশটির মতে, এই যুদ্ধ শুধু ভূখণ্ডে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত মার্কিন প্রশাসনের জন্যও কঠিন বাস্তবতা তৈরি করতে পারে। বিশ্বব্যাপী শক্তিনির্ভর বড় বড় কোম্পানির কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শক্তি সরবরাহ ব্যাহত হলে উৎপাদন, পরিবহন এবং শিল্প খাতের প্রতিটি স্তরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনকি বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

বিশ্ব বর্তমানে এক জ্বালানিভিত্তিক অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, আর হরমুজ প্রণালী সেই অর্থনীতির কেন্দ্রে অবস্থান করছে। ইরান যদি সত্যিই এই পথ বন্ধ করে দেয়, তবে এটি শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা পৃথিবীর জন্যই হবে এক টার্নিং পয়েন্ট।

মতামত দিন