আফগানিস্তানে ভূমিকম্প: ইতিহাসে ভয়াবহতম বিপর্যয়ে নিহত আট শতাধিক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ রোববার গভীর রাতে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা ৬ মাত্রার ভূমিকম্প দেশটিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে নিহত হয়েছেন ৮০০ জনের বেশি, আহত হয়েছেন অন্তত ২ হাজার ৫০০ জন। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল কুনার প্রদেশের নুর গুল জেলা, যা পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি। এর পাশাপাশি সাওকি, ওয়াটপুর, মানোগি এবং চাপা দারা জেলাতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভূমিধসের কারণে সাওকি জেলার দেওয়া গুল এবং নুর গুল জেলার মাজার দারা যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উদ্ধারকারী দলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না।
আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান জানিয়েছেন, কুনারের অন্তত তিনটি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে হঠাৎ করে আহতদের ঢল নেমেছে। দেশটির সীমিত চিকিৎসা অবকাঠামো এই বিপর্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
রাজধানী কাবুল ও পাকিস্তানের ইসলামাবাদেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়। স্থানীয়রা বলছেন, এত ভয়াবহ ভূমিকম্প তারা আগে কখনো দেখেননি। ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পটি মাত্র ৮ কিলোমিটার গভীরে ঘটেছিল, যা এর ধ্বংসযজ্ঞকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
আফগানিস্তানের ভূমিকম্পপ্রবণ ইতিহাস দীর্ঘ। ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাখার প্রদেশে আঘাত হানা ভূমিকম্পে প্রাণ হারান প্রায় ৪ হাজার মানুষ। ২০০২ সালে বাগলান প্রদেশে আঘাত হানা ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিলেন প্রায় এক হাজার মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তানের ভৌগলিক অবস্থান ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে এমন ভূমিকম্প দেশটির জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
সরকার জানিয়েছে, উদ্ধারকাজ এখনো চলমান। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছাতে না পারায় অনেক হতাহতের খবর এখনও অজানা রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো জরুরি সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
আফগানিস্তানের দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া সম্ভব নয়। আমরা আশঙ্কা করছি নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে।”
এই বিপর্যয় আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগগুলোর একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মতামত দিন