শেখ হাসিনার বিচার শেষপ্রান্তে, চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষা
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম এখন শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। মাত্র ৯ কার্যদিবসে আদালতে ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে আন্দোলনে শহীদ হওয়া ছয়জনের বাবা-মা ও ভাই, আহত আন্দোলনকারী, প্রত্যক্ষদর্শী এবং চিকিৎসকরা ছিলেন। প্রত্যেকেই আদালতে একমত হয়ে বলেছেন, হাজারো নিরীহ মানুষের হত্যার দায়ে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।মামলার প্রসিকিউশন জানিয়েছে, বাকি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আরও ১০ থেকে ১৫ জন সাক্ষী রয়েছেন। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা এবং একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকও অন্তর্ভুক্ত। সব সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগতে পারে। প্রসিকিউশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণার দিন ঠিক করবে।
এই মামলায় মোট ৮১ জন সাক্ষী তালিকাভুক্ত রয়েছেন। ইতোমধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করেছেন এবং রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেবেন। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য শেষে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন করবেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ১ হাজার ৪০০ আন্দোলনকারীকে হত্যার নির্দেশ, উসকানি, প্ররোচনা, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ ও ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’—এই পাঁচটি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান শুরু থেকেই পলাতক।
বিচারক মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ করছে। অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বর্তমানে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একটি দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনা সংক্রান্ত এবং অন্যটি রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে।
সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হলে, আগামী অক্টোবরের মধ্যেই এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ হবে। ফলে শিগগিরই এ বিচার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত রায়ের দিকে অগ্রসর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মতামত দিন