মরিচের রাজ্যে রেললাইন এখন লালগালিচা
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ॥ গ্রীষ্ম এলেই ঠাকুরগাঁওয়ের মাঠে মাঠে শুরু হয় মরিচ চাষের উৎসব। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। জেলার পাঁচটি উপজেলায় চাষ হয়েছে নানা জাতের মরিচ, যার ফলন ও বাজারদর—উভয়ই চাষিদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া রেলস্টেশন এলাকায় দৃশ্যটা যেন আরও স্পষ্ট। রেললাইনজুড়ে শুকানো হচ্ছে পাকা মরিচ। এই প্রক্রিয়া মরিচের ঝাঁজালো ঘ্রাণ ছড়িয়ে দিচ্ছে আশপাশের গ্রামে।এই মরিচ পাকা হলেই উঠানো হয় মাঠ থেকে। পরে তা নিয়ে আসা হয় স্টেশনের পাশে রেললাইনের ধারে। সেখানে বিছানো হয় পাটি ও মাদুর। মরিচ শুকিয়ে নেওয়ার পর তা প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
চাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, “এ বছর প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১২ মণ মরিচ পেয়েছি। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৫শ থেকে ৭ হাজার টাকায়। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা, কিন্তু লাভ হচ্ছে অনেক বেশি।”
জেলার কৃষকরা এখন মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছেন বেশি। কারণ এতে খরচ তুলনায় কম, কিন্তু লাভ বেশি। এর অন্যতম কারণ হলো এই এলাকার মাটি ও আবহাওয়া। মরিচের চাষে প্রাকৃতিকভাবেই সহায়ক হওয়ায় ফলন হয় বেশি এবং গুণগত মানও থাকে উন্নত।
মরিচ কিনতে আসা ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, “এখানকার মরিচের স্বাদ ও গন্ধ অন্য জায়গার চেয়ে ভিন্ন। তাই চাহিদাও বেশি।” বগুড়া থেকে আসা ব্যবসায়ী মহসিন আলী যোগ করেন, “আমরা এখানে শুধু মরিচ কিনতে আসি। এই মরিচ সারাদেশে সরবরাহ করি।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এই মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে ১ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩২২ হেক্টরের ফসল কাটা হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১.৯২ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আলমগীর কবীর বলেন, “চাষিদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে আমরা ফলন বাড়াতে পেরেছি। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে এবং দামও ভালো। এতে চাষিরা উৎসাহিত হচ্ছেন। মরিচ এখন ঠাকুরগাঁওয়ের অন্যতম অর্থকরী ফসল।”
রুহিয়া কুজিশহর, আসানগড়, হরিপুর, রাণীশংকৈল, পীরগঞ্জসহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা মরিচচাষে রঙিন হয়ে উঠেছে। গৃহস্থ বাড়ির উঠানে শুকাতে দেওয়া মরিচের ঘ্রাণে ম ম করছে বাতাস। এই ঘ্রাণ যেমন আঞ্চলিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে, তেমনি কৃষক পরিবারে ফিরিয়ে আনছে স্বস্তি ও সম্ভাবনার হাসি।
মতামত দিন