বৃক্ষপ্রেমী বিষ্ণু হাজরা: শ্রীমঙ্গলে পরিবেশের নীরব বিপ্লব
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ॥ শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক বিষ্ণু হাজরা ২৮ বছর ধরে গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষায় অনন্য অবদান রাখছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, জনসাধারণের কল্যাণে তার বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম চলমান। মসজিদ, মন্দির, স্কুল, সড়ক ও জলাশয়ের পাড়ে তিনি গাছ লাগান এবং পরিচর্যা করেন।বিষ্ণু জানান, ১৯৯৭ সালে টিউশনি থেকে আয়ের সামান্য অর্থ দিয়ে গাছ লাগানো শুরু করেন। প্রথম দিকে রাস্তা ও ফাঁকা মাঠেই চারা লাগাতেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত হকার হিসেবে কাজ করতে করতে পরিবেশ বিষয়ক প্রতিবেদন পড়ার পর গাছ লাগানোর আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। ২০২০ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও শেয়ার করতে শুরু করলে স্থানীয়রা তার সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করেন।
তিনি ইতিমধ্যেই ২০ হাজারেরও বেশি ফলজ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করেছেন। ভাড়াউড়া চা-বাগানের বিভিন্ন স্থানে তিনি নিজের বাইসাইকেলে চারা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে ছোটেন। জন্মদিন, বিবাহ বা মৃত্যুবার্ষিকীতে তিনি চারা দান করে থাকেন।
স্থানীয়রা বলেন, “বিষ্ণু নিজে খরচ করে সবসময় চারা রোপণ করেন। রাস্তার ধারে, স্কুল ও মসজিদের আশপাশ, শ্মশান—সবখানেই গাছ লাগান।” তার পরিবারও তার এই উদ্যোগের প্রতি গর্বিত।
বিষ্ণু বলেন, “অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বন-জঙ্গল উজাড়, নদী দূষণ ও প্লাস্টিক দূষণ পরিবেশকে নষ্ট করছে। এসব রক্ষায় বৃক্ষরোপণ অপরিহার্য। শুধু লাগানোই নয়, রক্ষা করাও জরুরি।”
শ্রীমঙ্গলের ইউএনও মোঃ ইসলাম উদ্দিন বলেন, “বিষ্ণু হাজরার বৃক্ষপ্রেম প্রমাণ করে, ব্যক্তি উদ্যোগ সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তিনি চাইলে আমরা চারা বিতরণের মাধ্যমে সহযোগিতা করবো।”
বিষ্ণু হাজরার ২৮ বছরের এই নিঃশব্দ প্রচেষ্টা স্থানীয়ভাবে এক বিপ্লব হিসেবে গণ্য হচ্ছে। তার উদ্যম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিবেশ রক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মতামত দিন