এম.কে. রানা
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট মাসে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এ ঘটনার পর, দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা এবং অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হলেও, এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে: একটি দৃঢ় এবং স্থিতিশীল রাষ্ট্রের পুনর্গঠন। কিন্তু এই পুনর্গঠনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সহনশীলতা।
গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে দেশে নানা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা মতপার্থক্য এবং স্বার্থের সংঘাত পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। তবে, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে, দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতা ও সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি। তা না হলে, দেশের স্থিতিশীলতা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
প্রথমত, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। একটি দেশের শাসন ব্যবস্থা এমনভাবে পরিচালিত হতে হবে যাতে সব দল একে অপরকে সমাদর ও সম্মান প্রদান করে। তাতে দেশের জনগণ, যারা সকল রাজনৈতিক দলের প্রভাবের বাইরে, তারা উপকৃত হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে স্বার্থপরতা ও অহংকারের পরিবর্তে জনগণের কল্যাণে কাজ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সহনশীলতার প্রয়োজনীয়তা। শুধু নিজেদের মতামত ও চিন্তাভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। অন্যান্য দল এবং তাদের সমর্থকদের প্রতি সহানুভূতির মনোভাব সৃষ্টি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন মতবাদ, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দেশের উন্নতি সম্ভব। দেশব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আন্তরিক সংলাপ এবং মতবিনিময়ের পথ খোলা থাকতে হবে।
দেশের পুনর্গঠন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যা শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য এবং সহনশীলতার মাধ্যমে সম্ভব। সকল দলের নেতাদের এবং জনগণের দায়িত্ব হলো একে অপরকে সমর্থন এবং সহযোগিতা করে একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ প্রতিষ্ঠা করা। সকল ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতা পরিহার করে, দলগুলোর উচিত নিজেদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সহনশীলতা থেকে পথ চলা শুরু করা।
এই মুহূর্তে দেশ ও জনগণের স্বার্থে একত্রে কাজ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ঐক্য ও সহনশীলতার মূল্য অপরিসীম।