ডেস্ক রিপোর্ট ॥ গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে ৮টির বেশি গোপন বন্দিশালা শনাক্ত করা হয়েছে, যেখানে গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটকে রাখা হতো। কমিশনের তথ্যমতে, এসব বন্দিশালা পরিচালনা করত প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), র্যাব এবং পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে এই ধরনের গোপন স্থাপনাগুলোর মাধ্যমে গুম হওয়া ব্যক্তিদের দীর্ঘসময় ধরে আটকে রাখা হতো। কখনও কখনও তাদের সাধারণ বন্দীদের সঙ্গে রেখে আরও কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হতো। এসব বন্দিশালায় তাদের বন্দী থাকার সময়কাল ছিল ভিন্ন ভিন্ন—কেউ কয়েকদিন, কেউ কয়েক সপ্তাহ, আবার কেউ মাস বা বছরের পর বছর আটকে ছিলেন।
কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে গত শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, এ পর্যন্ত ১,৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটকে রাখা গোপন বন্দিশালাগুলোর স্থান চিহ্নিত করতে তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, অনেক ভুক্তভোগী জীবিত ফিরে এসে বলেছেন, তাদেরকে সাধারণ বন্দীদের সঙ্গে রাখা হয়েছিল। এমনকি কিছু গুমের শিকার ব্যক্তির সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে যে, তাদেরকে সেসব বন্দিশালায় বন্দী রাখা হয়েছিল, যেখানে বৈধ ও অবৈধ বন্দীদের একত্রে রাখা হতো। এটি গুমের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতো, দাবি করেছে কমিশন।
কমিশন জানায়, তারা এসব বন্দিশালার স্থান পরিদর্শন করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছে। গোপন বন্দিশালাগুলোকে শনাক্ত করার জন্য কমিশন বিভিন্ন দপ্তরে তদন্ত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ডিজিএফআই, সিটিটিসি, ডিএমপির ডিবি, র্যাব ইউনিট ২, ৪, ৭ ও ১১, র্যাব সদর দপ্তর, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার এবং এনএসআই-এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়।
কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব গোপন বন্দিশালা শনাক্তকরণের ফলে গুমের ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে, এবং এর ফলে দেশে গুমের ঘটনা নিয়ে আরও বেশি সচেতনতা সৃষ্টি হবে।