আশাশুনি প্রতিনিধি ॥ আশাশুনি উপজেলার সম্মেলন কক্ষে জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভ্যন্তরীণ অভিবাসন/বাস্তুচ্যুতি শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশ, খুলনা অঞ্চলের ডিআরআর এন্ড সিসিএ প্রজেক্টের উদ্যোগে মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায়।
বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ইউপি চেয়ারম্যান, এনজিও কর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক, স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, এবং জলবায়ু বাস্তুচ্যুত ভুক্তভোগীরা অংশ নেন। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. মো: ইসমাইল হোসেন জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি পরিবেশগত বিপর্যয়ের জন্য মানব কার্যকলাপকে প্রধান দায়ী হিসেবে তুলে ধরে বলেন, “বনভূমি উজাড়, কলকারখানা ও যানবাহনের দূষণ অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ড. ইসমাইল ২০২০ সালের একটি তথ্য উল্লেখ করে জানান, সরকারি সহায়তার অভাব, দুর্বল বেড়িবাঁধ ও দুর্নীতি, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন বাড়ছে। বৈঠকে অভিবাসন রোধে এবং জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় ২৫ দফা সুপারিশ করা হয়।
প্রধান সুপারিশসমূহ
দুর্নীতি রোধে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ
পরিকল্পিত চিংড়ি চাষ ও বনায়ন বৃদ্ধি
খাল ও নদীর প্রবাহ উন্মুক্ত রাখা
আধুনিক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ
যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি
জলাবদ্ধতা নিরসনে স্লুইসগেট স্থাপন
লবণাক্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সহজপ্রাপ্যতা
বৈষম্যহীন দুর্যোগ-প্রতিরোধী আবাসন
বক্তারা উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের আন্তরিকতা বাড়াতে হবে এবং সরকারি পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তারা খাস জমিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, স্থানীয় শিল্প ও ছোট ব্যবসার প্রসার, এবং সঠিক ভূমি বণ্টন নীতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কৃষি কর্মকর্তা এসএম এনামুল হক, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যানার্জি এবং আশাশুনি ও কয়রার সাংবাদিকরা।
এই বৈঠক থেকে প্রাপ্ত সুপারিশগুলো ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অংশগ্রহণকারীরা।