মেহেরপুর প্রতিনিধি ॥ শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে মেহেরপুর জেলায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী চাল কুমড়োর বড়ি তৈরির ধুম। ঘন কুয়াশা আর তীব্র ঠাণ্ডার ভোরে পাড়া-মহল্লার নারীরা চাল কুমড়ো ও কলাইয়ের ডাল দিয়ে বড়ি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীতকাল জুড়েই মেহেরপুরের ঘরে ঘরে তৈরি হবে এই মুখরোচক বড়ি, যা সারা বছর তরকারির স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত হবে।
এলাকার গৃহবধূরা জানান, চাল কুমড়ো ঝুড়ার পর কলাইয়ের ডালের সাথে মিশিয়ে বড়ি তৈরি করা হয়। ভোরবেলায় নারী-পুরুষ মিলে বড়ি কোটা মিলে গিয়ে মিশ্রণ তৈরি করেন। এরপর বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঘরের আঙিনা বা ছাদে বৃত্তাকারে সাজিয়ে রোদে শুকানো হয় বড়ি। এক সপ্তাহ পর এগুলো খাওয়ার উপযোগী হয়ে হাট-বাজারে বিক্রি হয়।
বড়ি তৈরির প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ হলেও এর স্বাদ সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয় বলে জানান গৃহিণীরা। একবার বড়ি তৈরি করে সারা বছরের তরকারির চাহিদা পূরণ করা যায়। শুধু দেশেই নয়, মেহেরপুরের এই চাল কুমড়োর বড়ির চাহিদা দেশের বাইরেও রয়েছে।
মেহেরপুরের বড়ি তৈরির এই ঐতিহ্য অনেক পুরোনো। স্থানীয়রা জানান, চাল কুমড়ো ঝুড়ার পর তার ঝুড়ি এবং কলাইয়ের ডাল মিশিয়ে তৈরি করা মিশ্রণ থেকে বড়ি বানানো হয়। তারপর রোদে শুকানোর পর এই বড়ি তার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্বাদে তরকারির ঝোল কিংবা ভর্তার সঙ্গে মিলিয়ে অসাধারণ স্বাদ এনে দেয়।
স্থানীয় বাজারে বড়ির দাম নির্ভর করে এর মানের ওপর। প্রতিটি বড়ি তৈরি করতে সময় ও শ্রম বেশি লাগলেও এর বিক্রয় মূল্য নারীদের শ্রমের সার্থকতা এনে দেয়। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে নারীরা এখনো তাদের পূর্বপুরুষদের পদ্ধতিতে বড়ি তৈরি করছেন।
বড়ি বানানোর কাঁচামাল চাল কুমড়ো এবং কলাইয়ের ডাল স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এতে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়, অন্যদিকে এটি রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে মেহেরপুরের সুনাম বাড়াচ্ছে।
শীত জুড়ে মেহেরপুরের আঙিনা ও বাড়ির ছাদগুলো বড়ির সাদা সৌন্দর্যে ভরে ওঠে। এলাকাবাসী আশা করেন, এই ঐতিহ্য ভবিষ্যতেও একইভাবে সংরক্ষিত থাকবে।