আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র তথা ইসকনের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ প্রভুর গ্রেফতারির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করল নয়া দিল্লি। মঙ্গলবার একটি বিবৃতিতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর একের পর এক আক্রমণের ঘটনার আবহে হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়ের গ্রেফতারি এবং তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তোলা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
বিদেশ মন্ত্রকের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সে দেশের সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, বিশেষত হিন্দুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে অনুরোধ করছি। পাশাপাশি, তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও মতপ্রকাশের অধিকারও রক্ষা করা হোক।’’ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং চিন্ময়ের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিজেপি বিধায়কেরা। মঙ্গলবার বিকেলে বেহালায় একটি মশাল মিছিলেরও ডাক দেওয়া হয়েছিল। মিছিলে ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সোমবার ঢাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন চিন্ময়। তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ এনে তাঁর জামিনও নাকচ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। বর্তমানে তিনি বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। উল্লেখ্য, তাঁকে হেফাজতে নিতে চেয়ে কোনও আবেদন করেনি বাংলাদেশের পুলিশ। তবে আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, বন্দি অবস্থায় চিন্ময়ের সমস্ত ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজোড়া অশান্তির আবহে বেশ কিছু ধর্মীয় সংগঠন মিলে তৈরি করে সনাতনী জাগরণ মঞ্চ। মঞ্চের মুখপাত্র নির্বাচিত হন চিন্ময়। তাঁরই ডাকে বাংলাদেশের শহিদ মিনার, চট্টগ্রাম ইত্যাদি নানা এলাকায় সমাবেশে অংশ নেন হাজার হাজার সংখ্যালঘু। চট্টগ্রামে সমাবেশের পর তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করেছিলেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। ওই মামলাতেই সোমবার তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ জুড়ে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। দেশের নানা প্রান্তে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বহু ঘরবাড়ি। ভাঙচুর চালানো হয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতেও। ইউনূস-পরিচালিত অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি বলে অভিযোগ। তবে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বারবারই আশ্বাস দিয়েছেন, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও ধর্মীয় অধিকার সুনিশ্চিত করবেন তারা। দেশবাসীকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। তবে ইউনূসের সরকার উগ্র ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলাকারীদের কতটা সামলাতে পারছেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে নানা মহলেই।
সূত্র: আনন্দবাজার