পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥ পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের কাটাখালি গ্রামের খালের ওপর আয়রন ব্রিজটি উদ্বোধন হয়েছিল ২০০০ সালে। কিন্তু ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ব্রিজটির নির্মাণ কাজ আজও শেষ হয়নি। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজটি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।

জানা গেছে, প্রায় দুই যুগ আগে তৎকালীন সংসদ সদস্য ফায়জুল হক ব্রিজটি উদ্বোধন করেন। রেজাউল করিম নামে এক ঠিকাদার কাজ শুরু করেন, তবে লোহার পিলার বসানোর পর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ঠিকাদার মারা যাওয়ার পর থেকে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ অচলাবস্থায় পড়ে থাকে। ২০২৩ সালে বর্তমান সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম নতুন করে ব্রিজটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু নতুন ঠিকাদার আমির হোসেনও কাজ শেষ না করে পলাতক রয়েছেন।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম জানান, ব্রিজটি নির্মাণে সংযোগ সড়ক তৈরির জন্য জমি প্রয়োজন। স্থানীয়রা সেই জমি দিতে রাজি না হওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে আছে। তিনি আরও জানান, ঢালের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় প্রকল্পটি এখনও অসম্পূর্ণ।

কাটাখালি গ্রামের তানভীর আহমেদ বলেন, “ব্রিজটির জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। একাধিকবার কাজ শুরু হলেও তা শেষ করা হয়নি। গাছের পাটাতন দিয়ে আমরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি। ব্রিজটি যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে।”

ব্রিজটির পারাপারে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য বিশেষ ঝুঁকি রয়েছে। বলদিয়া সরকারি প্রাথমিক ও সেন্টার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, ব্রিজে উঠলেই মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে। ব্রিজটির হাতলও নেই, ফলে প্রতিদিন তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছেন।

বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বলেন, “কাটাখালির খালের ওপর এই ব্রিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক বছর আগে কাজ শুরু হয়েছিল, তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করেই চলে গেছে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের চাপ প্রয়োগ করা হবে।”

এ বিষয়ে বর্তমান ঠিকাদার আমির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজটির অবস্থা এতটাই বেহাল যে, এর কাঠের পাটাতন ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয়রা জানান, ব্রিজটি যেকোনো সময় খালের পানিতে ধসে পড়তে পারে। এর ফলে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরুজ্জামান বলেন, “ব্রিজটির নির্মাণ কাজ নিয়ে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছি। সংযোগ সড়কের জমি না পাওয়ায় কাজ বন্ধ আছে। স্থানীয় জনগণ জমি দিলে দ্রুত কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।”

এলাকাবাসী দাবি করেছেন, দ্রুত যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে ব্রিজটির কাজ সম্পন্ন করা হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *