ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ (এনসিপিটি)। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সেমিনারে এই আহ্বান জানানো হয়। সেমিনারের শিরোনাম ছিল, “বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন: কার্যকর ও টেকসই সংস্কার”।

সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদের সভাপতি ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম। সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন।

গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার ইতিহাস ও চ্যালেঞ্জ
অধ্যাপক নাজনীন বলেন, “স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের পেছনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্রের কবর রচিত হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।”

তিনি অভিযোগ করেন, “বর্তমান সরকার বারবার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। স্বৈরাচারী আওয়ামী আমলে ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়নি। আমরা আশা করছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে।”

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির পক্ষে প্রবন্ধ
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয়নি। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন তার প্রমাণ। ফলে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কারে প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি পরিবর্তন প্রয়োজন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার জরুরি।”

অতীতের শিক্ষা নিয়ে এগোনোর আহ্বান
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, “পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার বারবার ক্ষুণ্ন হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশনকে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক রক্ত ঝরেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দীন জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা তার ওপর আস্থা রাখতে চাই।”

সেমিনারের অন্যান্য বক্তব্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারেক ফজল, নিরাপত্তা বিশ্লেষক জিয়া হাসান, এবং সাবেক সচিব শেখ মোতাহার হোসেন। বক্তারা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন সংস্কারের আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *