আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন গুঞ্জন ও জল্পনা চলছে তার অবস্থান নিয়ে। ভারতের সরকারও আনুষ্ঠানিকভাবে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য জানায়নি। তবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল ১৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "তিনি স্বল্প সময়ের নোটিশে এখানে এসেছিলেন এবং তিনি এখানেই রয়েছেন।"
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা বর্তমানে দিল্লির লুটিয়েনস বাংলো জোনের একটি সুরক্ষিত হাউসে বসবাস করছেন। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারত সরকার তার জন্য এই ব্যবস্থা করেছে। জানা গেছে, লুটিয়েনসের এই বাংলো সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত বাড়ির মতো, এবং শেখ হাসিনার মর্যাদা অনুযায়ী সেখানে তাকে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনার নিরাপত্তার ব্যাপারে দ্য প্রিন্ট জানাচ্ছে, তিনি মাঝে মাঝে দিল্লির লোধি গার্ডেনে হাঁটাহাঁটি করেন, এবং তার জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে সার্বক্ষণিক সাদা পোশাকে পাহারা দেন। শেখ হাসিনা সেখানে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন, এবং তার থাকার সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছান শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠরা। এই ঘটনার পর দেশের পরিস্থিতির অবনতির কারণে পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টা পর তিনি ভারতে চলে আসেন। হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। তবে বিমানঘাঁটিতে বেশিদিন থাকতে পারেননি তিনি, এবং পরে নিরাপত্তার কারণে তাকে দিল্লির লুটিয়েনস এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়।
দ্য প্রিন্টের সূত্রে জানা গেছে, লুটিয়েনসের এলাকা নিরাপদ এবং সুরক্ষিত, যেখানে অনেক সাবেক ও বর্তমান সাংসদের বাড়ি রয়েছে। শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত গ্রুপকে জানানো হলে বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার অবস্থান বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত আগস্টে সংসদে বলেছেন যে, শেখ হাসিনা সংক্ষিপ্ত সময়ের নোটিশে ভারতে আসার অনুমতি চেয়েছিলেন।
শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের অবস্থান নিয়েও গুঞ্জন রয়েছে। জানা গেছে, তার বোন ব্রিটিশ নাগরিক শেখ রেহানা দিল্লিতে এসেছেন, তবে তিনি তার বোনের সাথে থাকছেন কি না তা স্পষ্ট নয়। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দিল্লিতে কর্মরত আছেন।
এই রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে, ২০১০ সালে শেখ হাসিনার প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) একাধিক মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, শেখ হাসিনা ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ৬০টির বেশি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার উল্লেখ করেছেন, আদালতের কৌঁসুলিদের দায়ের করা দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ জারি করা হয়েছে। আদালত কর্তৃপক্ষকে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত শেখ হাসিনার অবস্থান ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তোলপাড় চলছে, এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে ভারত ও বাংলাদেশের সরকারের।