বরিশাল প্রতিনিধি ॥ “রক্ত দিয়ে যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, আবার রক্ত দিয়ে সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। খুনিদের বিচার করতে হবে। তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাবার জন্য যদি আরেকটি সংগ্রাম করার প্রয়োজন হয়, বাংলার মানুষ সে সংগ্রাম করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে”। বুধবার বরিশাল নগরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আয়োজিত গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এর মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক।

শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচারের দাবি এবং নৈরাজ্যবাদ প্রতিরোধে এই গণ সমাবেশ মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক আরও বলেন, বীর শহিদদের আত্মত্যাগ, কোরবানি আর জীবনদানের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। এই সকল শহিদানদেরকে স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পাশাপাশি স্পষ্ট ভাষায় খুনি হত্যাকারী, বিদায়ী পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে, খুনি মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দ, তাদের দলীয় সাঙ্গপাঙ্গ, হেলমেট লীগ, হাতুড়ি লীগের সদস্য এবং প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পরিবর্তে যারা আওয়ামী দলীয় বাহিনীতে নিজেদের পরিণত করেছে সেই সকল অত্যাচারী খুনিদেরকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার জন্য জোড় দাবি জানাই।

এসময় তিনি ছাত্র-জনতা এবং দেশের আলেম সমাজকে সতর্ক করে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মনে রাখতে হবে বিজয় আর স্বাধীনতা অর্জন করা যত কঠিন, তার থেকেও বড় কঠিন ও বড় দায়িত্ব এই বিজয় এবং স্বাধীনতাকে রক্ষা করা। আজ বাংলার আকাশে শকুনের আনাগোনা দেখা যায়। বাংলাদেশের বিজয়কে ছিনতাই করে, ছাত্র-জনতার রক্ত দিয়ে গড়া এই মহান বিপ্লবকে ব্যর্থ করে দেয়াড় জন্য আবার নতুন ষড়যন্ত্রের দানা বাধতে আমরা দেখছি। অন্য আরেকটি দেশের আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে এবং তাদের প্রত্যক্ষ -পরোক্ষ মদদে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করার জন্য আবার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু বাংলার ২০ কোটি জনতাকে সেই ষড়যন্ত্রকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। যে ফ্যাসিবাদকে এ দেশের ছাত্র জনতা বিতাড়িত করেছে, সেই ফ্যাসিবাদ আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর পাঁয়তারা করছে। প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী দুর্বৃত্তদের দোসররা আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে।

এসময় তিনি মোদী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছ, সে খুন-হত্যা মামলার আসামি। হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের হত্যাকান্ডের একজন আসামিকে প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তোমরা অবস্থান গ্রহণ করেছ। বাংলাদেশের আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। সেই আসামিকে বাংলাদেশে হস্তান্তর কর।

মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনা সেদিন চেষ্টা করেছিল আরও খুন করতে, হত্যা করতে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দেশের জনতার পাশে এসে দাঁড়ানোর কারণে শেখ হাসিনার স্বপ্নটা ধুলোয় মিশে গিয়েছিল। পালিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটি ব্যবহারের সুযোগ পায়নি, আকাশ পথে উড়াল দিয়ে যে তার প্রভুর ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রমাণ হয়েছে জনতার শক্তির সামনে স্বৈরাচারী শক্তি যত বড়ই হোক না কেন কোনোদিন চিরস্থায়ী টিকে থাকতে পারে না, শেখ হাসিনাও পারেনি।

অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে মামুনুল হক বলেন, অতিসত্বর সকল রাজনৈতিক দলের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করে বাংলাদেশ বিরোধী প্রতিটি ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করবার ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। সকল রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন। তাদের সহযোগিতা নিশ্চিত করুন এবং যত দ্রুত সম্ভব হয় আগামী দিনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিগত দিনের বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, এলডিপি, এনডিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ সকল রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে আমি উদাত্ত আহ্বান জানাবো, এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে গড়ে ওঠা আমাদের ঐক্যকে সীসাঢালা প্রাচীরের মতো মজবুদ রাখতে হবে। দেশপ্রেমিক জনতা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে বিদেশি কোন প্রভুদের প্রশ্রয়ে সেই ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে আর নতুন করে ফিরে আসার সুযোগ পাবে না। কিন্তু আমরা যদি দ্বিধা বিভক্ত হই, আমাদেরকে আবার কোন ভিনদেশি শক্তির হাতে এ দেশের স্বাধীনতাকে ইজারা রাখতে হবে। কাজেই সেই দিন আমরা দেখতে চাই না।

মামুনুল হক বলেন, আমরা চাই বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, আমরা চাই ইনসাফপূর্ণ বাংলাদেশ। মানব খচিত তন্ত্র মন্ত্র দিয়ে কস্মিনকালেও পূর্ণাঙ্গ বৈষম্যহীন ইনসাফপূর্ণ সমাজ গড়া সম্ভব হবে না। এজন্য আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দেয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে বিদায় করে আমরা আমাদের যাত্রা থামিয়ে দিতে চাই না, আমাদের গন্তব্য বহুদূর, মঞ্জিল বহুদূর। আমরা খ্যান্ত হবো সেদিন যেদিন বাংলার সংবিধান হবে আল কুরআন, যেদিন বাংলার মাটিতে বাস্তবায়ন হবে খেলাফত ব্যবস্থা।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বরিশাল জেলার আহবায়ক মাওলানা মুহাম্মাদ জোবায়ের গালিব এর সভাপতিত্বে গণসমাবেশে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *