বরিশাল প্রতিনিধি ॥ পিতৃহীন এতিম শিশুর অধিকার নিশ্চিত ও পৈত্রিক ভিটা ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে মা কাকলি বেগম। সেইসাথে শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে গিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতার প্রভাবে শ্বশুরবাড়ি লোক কর্তৃক নির্যাতনের ঘটনারও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ভুক্তভোগী মা। আর এই দাবিতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।

সোমবার (২১ অক্টোবর) বেলা ১২ টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার স্বামী কামাল হোসেন মিন্টু দীর্ঘদিন ধরে জীবিকার জন্য প্রবাসে থেকেছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি দেশে চলে আসার পর ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তখন থেকে ১১ বছরের শিশু সন্তান মো. মিনহাজ ও শ্বশুর আ. মজিদ ফকিরকে নিয়ে স্বামীর নিজের গড়া আধাপাকা ভবনে বসবাস করে আসছি। কিন্তু কিছুদিন পরেই বৃদ্ধ শ্বশুর শারীরিকভাবে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে যে তিনি চলাচলে অক্ষম হয়ে পড়েন এবং দৈনন্দিন কার্য সম্পাদনেও অক্ষম হয়ে পড়েন।।

তিনি বলেন, এই সুযোগে একমাত্র ননদ বিউটি বেগম এবং ইমাম হোসেন, মো. মিজান ও মো. হুমাউনসহ চার দেবররা আমার ওপর মানসিক নির্যাতন শুরু করে। তারা স্বামীর ভিটা ছাড়ার জন্য হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। তবে তাতে আমি ভ্রূক্ষেপ না করলে ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে আমার একমাত্র ননদের সহযোগিতায় দেবর ইমাম হোসেন ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ডাক-চিৎকার দিয়ে ওই রাতে কোনোভাবে রক্ষা পেয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করি।

এদিকে গুরুতর শারীরিক অবস্থার মাঝেই আমার দেবর ও ননদরা মিলে শ্বশুরের সম্পত্তি প্রতারণার মাধ্যমে কৌশলে নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করে নেয়। যেখানে ওয়ারিশ হওয়া সত্ত্বেও আমার স্বামীর অংশে কিছুই রাখা হয়নি। বিষয়টি আমি জানতে পেরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে তারা তাতে তেমন কোন ভ্রূক্ষেপ না করলে; সে ঘটনায় এতিম শিশুর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ন্যায় বিচারের আশায় আদালতে একটি মামলা দেই। মামলা দায়েরের কিছুদিন পরে আমার শ্বশুর মৃত্যুবরণ করেন।

অপরদিকে এর মাঝেই স্থানীয় বিএনপি নেতা আ. ছত্তার খান ও তার শ্যালক যুবদল নেতা রুহুল আমিন খান আমার ননদ ও দেবরদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পিতৃহীন শিশুসন্তানসহ আমাকে ঘর ছাড়া করার পায়তারায় লিপ্ত হয়। যার ধারাবাহিকতায় বিভিন্নভাবে আমাকে ও আমার শিশু সন্তানকে নানানভাবে নির্যাতন শুরু করে।

তিনি বলেন, একপর্যায়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়ে পরের দিন চলতি বছরের গত ৬ আগস্ট বিএনপি নেতা আ. ছত্তার খান ও তার শ্যালক যুবদল নেতা রুহুল আমিন খানের প্রভাব দেখিয়ে ননদ ও দেবররা আমার স্বামীর হাতে গড়া বসতঘরে তালা দেয় এবং আমাদের সেখানে প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে।

এরপর মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র মো. মিনহাজকে নিয়ে আমি মানবেতর জীবনযাপন করছি। আজ এই আত্মীয়ের বাসায় কাল অন্যের বাসায় এভাবে থেকে দিন কাটাচ্ছি। কারও কাছে গিয়ে বিএনপি ও যুবদল নেতার কারণে বিচার চেয়েও, বিচার পাচ্ছি না। তারা নানানভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, যার ফলে এখন শিশু সন্তানকে নিয়ে জীবনযাপন করাটাই শঙ্কার মনে করছি। এ অবস্থায় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনার পাশাপাশি সন্তানের অধিকার পৈত্রিক সম্পদ ফিরে পাওয়াসহ জীবনের নিরাপত্তা চাচ্ছি।

তিনি বলেন, তবে আশার আলো হচ্ছে আমার ভাশুর জামাল হোসেন নান্টু দেবরদের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে তিনি শিশু সন্তানের নামে তার ভাগের সম্পদ লিখে দিয়েছেন। সেই হিসেব হলেও আমার বসতঘর দখলের কোনো সুযোগ নেই ননদ ও দেবরদের। এসব স্থানীয় বিএনপি নেতা আ. ছত্তার খান ও তার শ্যালকের জোরে করছে দখলদাররা। এছাড়াও সর্বশেষ চেয়ারম্যান কামরুল আহাসান জমি লিখে দেয়ার বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে মৃত্যুর আগে আমার শ্বশুর আ. মজিদ ফকির তা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা বিএনপি ১নং সদস্য আ. ছত্তার খান জানান, কাকলি বেগম ভুয়া কথাবার্তা বলে, সে বিগত সময় থানা- কোর্টে ও সেনাবাহিনীর কাছে গেছে। কিন্তু সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করার কারণে কোনো স্থানেই সুবিধা নিতে পারেনি। অপরদিকে যুবদল নেতা রুহুল আমিন খান জানান, ঘটনার দিন তিনি বরিশাল শহরে অবস্থান করেছেন তার স্ত্রী ঐ দিন অসুস্থ থাকায় তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছিলেন। এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তার বিরুদ্ধে মিথ্যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *