ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ছাত্রজনতার আন্দোলনে ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার ফলে সেখানে গড়ে উঠেছে একাধিক মানব পাচারকারী সিন্ডিকেট। অভিযোগ উঠেছে, এই সিন্ডিকেটে প্রায় ২০০ সদস্য সক্রিয় রয়েছে, যারা লাখ লাখ টাকা নিয়ে সরকারে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ভারতে পাচার করছে।

সাম্প্রতিক তথ্যে জানা যায়, মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় বিজিবির হাতে আটক হয়েছেন হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা, রোহিঙ্গা নারী এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা সহ ৩২৬ জন। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বিজিবির হাতে আটক হওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি মানুষ পার হয়ে যাচ্ছে ভারতে।

মহেশপুরের যাদবপুর, মাটিলা, সামন্তা, পলিয়ানপুর, বাঘাডাঙ্গা, খোশালপুর, শ্যামকুড়, শ্রীনাথপুর, কুসুমপুর এবং লড়াইঘাট এলাকাগুলোতে মানব পাচারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের ওপারে ভারতের নদীয়া জেলার হাসখালী ও উত্তর চব্বিশ পরগনার বাগদা থানা অবস্থিত। বাংলাদেশ অংশে মহেশপুর উপজেলা রয়েছে, যার সাথে ভারতের ৭৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।

সীমান্তের ৬৮ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রক্ষিত, বাকি ১০ কিলোমিটার অংশ অরক্ষিত, যেখানে মাঠ-ঘাট, নদী-নালা থাকায় পাচারকারীরা নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। বিজিবির টহল থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেট নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে পাচার চালাচ্ছে।

আইনজীবী এ্যাড জাকারিয়া মিলন জানান, বাংলাদেশে পাসপোর্টবিহীন কেউ সীমান্ত অতিক্রম করলে ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধ্যাদেশে মামলা হয়, যার সাজা ৩ মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০০ টাকা জরিমানা। ফলে আটক আসামীরা সহজেই জামিন পেয়ে যায়।

মহেশপুর খালিশপুর ব্যাটালিয়নের (৫৮ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্ণেল শাহ মোঃ আজিজুস শহীদ জানিয়েছেন, সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে, আইন সংশোধন করে জরিমানা ও সাজা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে, যাতে মানব পাচার রোধ করা সম্ভব হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *