ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর পছন্দের লোক হওয়ায় ২০২৩ সালে মার্চ মাসে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পান এ.কে.এম নিলয় পাশা। গত বিশ মাসে নানা কৌশলে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অফিস চত্বরের কয়েক লাখ টাকার গাছ কেটে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তিনি সুগন্ধা নদীর ভাঙ্গন থেকে ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলা সদর রক্ষা প্রকল্পের ৬৮০ কোটি টাকার কাজ শুরু করার আগেই কোটেশনের মাধ্যমে ল্যাপটপ ও ফটোকপি মেশিন কেনার নামে ২৫ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বিভিন্ন ঠিকাদারের নামে। বরিশালের ওশিয়ান এন্টারপ্রাইজের নামে টাকা তুলে নেয়ায়া হলেও ওশিয়ানের মালিক তানভির আহমেদ কিছুই জানেন না।

অভিযোগ এবং অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন নিলয় পাশা। যোগদানের পরই তিনি অফিস কম্পাউন্ডের লক্ষাধিক টাকা মূল্যের দুটি বড় মেহগনি গাছ কেটে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ গাছ আটক করে। পরবর্তীতে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সহায়তায় ব্যাকডেটে নিলাম দেখিয়ে রক্ষা পান। ২০২৩ -২০২৪ অর্থ বছরে ঝালকাঠি ও নলছিটি উপজেলা সদরের সুগন্ধা নদীর তীর রক্ষার জন্য ৬৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। ৩৪ প্যাকেজের এ প্রকল্পে নলছিটির দপদপিয়া থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর ভাঙ্গণ কবলিত অংশ এবং গাবখান নদীর ভাঙ্গণ কবলিত অংশে জিও ব্যাগ এবং সিসি ব্লক দিয়ে বাধঁ নির্মানের কাজ শুরু হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে নলছিটির দুটি প্যাকেজে ৭৪০ মিটার প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়েছে। আরও ৮ টি প্রকল্পের কার্যাদেশ প্রক্রিয়াধীন। আরও নয়টি প্যাকেজের সিডিউল বিক্রির শেষ দিন ২১ অক্টোবর। কিন্তু মূল প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগেই গত জুন মাসে নির্বাহী প্রকৌশলী নিলয় পাশা অতিগোপনে তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠনের নামে কোটেশন দেখিয়ে ল্যাপটপ, ফটোকপি মেশিন এবং আসবাবপত্র ক্রয়ের নামে ২৫ লাখ টাকা বিল করে উঠিয়ে নেন। অথচ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বরিশালের ওশিয়ান এন্টারপ্রাইজের মালিক তানভির আহমেদ কিছুই জানেন না।

কোটেশনে অংশ গ্রহণের বিষয়ে তানভির আহমেদ মোবাইল ফোনে বলেন, ল্যাপটপ, ফটোকপি মেশিন এবং আসবাবপত্র সরবারহ সংক্রান্ত কোটেশনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না, তবে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসে খোজ নিয়ে দেখতে পারি আমার লাইসেন্সে কোন কোটেশন দেখানো হয়েছে কি না।

ঝালকাঠির ঠিকাদার মাহামুদুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠির অফিসে কোন কোটেশন আহবান করা হলে সবার আগে ঝালকাঠির ঠিকাদাররা জানবে। ল্যাপটপ, ফটোকপি মেশিন এবং আসবাবপত্র সরবারহর কোটেশন সম্পূর্ন গোপন রাখা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী তাঁর ঘনিষ্ঠ বরিশালের ঠিকাদারদের লাইসেন্সে কোটেশন দেখিয়ে নিজেই টাকা তুলে নিয়েছেন। ২৫ লাখ টাকার কোটেশনে দুটি ল্যাপটপ এবং তিনটি ফটোকপি মেশিন অফিসে আনা হলেও বাকি মালামালের কোন হদিস নেই।

কাঁঠালিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় বিষখালী নদীর তীর রক্ষার দুটি জরুরি কাজ দেখিয়ে গোপনে ৩০ লাখ টাকা পিরোজপুরের ঠিকাদারের নামে তুলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে নিলয় পাশার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও নির্বাহী প্রকৌশলী নিলয় পাশার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়মিত অফিস করেন না ঝালকাঠিতে। বরিশালে তার স্ত্রী চাকুরী করায় তিনি বেশীরভাগ সময় বরিশালেই থাকেন। সেখানে তিনি বিকল্প অফিস বানিয়েছেন। ঝালকাঠির ঠিকাদাররা এবং অফিসের লোকজন বরিশালে গিয়ে স্বাক্ষর আনেন। অফিসে দুইজন ড্রাইভার থাকা সত্বেও তিনি স্পিডবোড চালক দিয়ে গাড়ি চালান এবং অফিসের গাড়ীতেই তিনি বরিশাল যাতায়াত করেন। আওয়ামী লীগের আমলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরী পাওয়া নিলয় পাশা নিজের দুর্নিতী আড়াল করতে এখন জামায়েতের সমর্থক সাজার চেস্টা করছেন এবং প্রচার চালাচ্ছেন তার বাড়ি বগুড়া জেলায়।

অভিযোগের বিষয়ে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, আমার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়। সঠিক প্রক্রিয়ায় কোটেশনের মাধ্যমে যাবতীয় মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। যিনি ঠিকাদার তিনি কোটেশনের বিষয়ে জানেন না এটা কিভাবে সম্ভব আমি বুঝি না। অনিয়ম আছে কি না অফিসে এসে দেখে যান !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *