বরিশাল প্রতিনিধি ॥  ছাত্র ও সমন্বয়ক পরিচয়ে হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী বরাবর সোমবার বিকেলে সকল বিভাগের ৩৪৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সাক্ষরিত ওই দাবি জানানো হয়। এর অনুলিপি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকেও দেওয়া হয়। হয়রানি বন্ধে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হবে বলে জানান বিসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ এসেছে। সহ¯্রাধিক ছাত্র জনতার তাজা রক্তের বিনিময়ে দ্বিতীয় স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরিতে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের সন্তান-স্বজনরা সহযাত্রী ছিল। কিন্তু গুটি কয়েক বিপথগামী ছাত্র পরিচয় দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া ওই ছাত্ররা নগর ভবনের বিভিন্ন শাখার প্রধানদের সাথে খারাপ আচরণ, আইন বহির্ভূত কাজের চাপ দিচ্ছে। তারা হাটবাজার শাখার সুপারিটেনডেন্টকে রুপাতলী ও সাগরদী বাজারের খাজনা উত্তোলন করার জন্য সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া এক ছাত্রের আত্মীয়কে দেওয়ার জন্য চাপপ্রয়োগ করেন। সুপারিনটেনডেন্ট তাতে অস্বীকৃতি জানালে ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে সুপারিনটেনডেন্টকে হয়রানি করে। অবৈধ উচ্ছেদ শাখার শাখা প্রধানকে জলাশয়, পুকুর, ডোবা, বালু দিয়ে ভরাটের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। আইনে জলাশয় পুকুর, ডোবা ভরাটের আইনগত বিধান নাই বলে জানালে সেই সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া ছাত্র টাকার বিনিময়ে হলেও ভরাট করার প্রস্তাব দেন। সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া ওই চক্রটি বিভিন্ন শাখায় গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাজিরা খাতা এবং গোপনীয় নথিপত্র দেখতে চান। বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসককে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে বেড়াচ্ছেন।

লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, মূলত ছাত্র নামধারী সমন্বয়কদের অযৌক্তিক দাবি না মেনে নেওয়ায় প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ তুলে অপসারণের দাবি তোলা হচ্ছে। এসব সুযোগসন্ধানী নামধারী সমন্বয়কদের হয়রানির বিরুদ্ধে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে সিটি করপোরেশনের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা কর্মবিরতিসহ বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবেন।

উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার সকালে নগর ভবন চত্বরে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)’র প্রশাসক মো. শওকত আলী ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তারকে অপসারনসহ অন্যান্য অন্যায় ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের অপসারণ চেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, নগর ভবনে নাগরিক সুবিধা নেই আদৌ। আগের ন্যায় অনিয়ম ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা অব্যাহত রয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণসহ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছিল। সেইসাথে এসবকিছুর প্রতিকার চেয়ে সাধারণ নাগরিক থেকে ব্যবসায়ী এবং আমাদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের গুন্ডা বলে আখ্যায়িত করেন সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মাসুমা আক্তার।

তারা বলেন, এদিকে সার্বিক বিষয়ে নগর প্রশাসক মো. শওকত আলীও কোন সমাধান করতে পারেনি এমনকি কাউকে জবাবদিহিতার আওতায়ও আনেত পারেনি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল কিন্তু তাও ভ্রূক্ষেপ করেননি তারা। ফলে এটা নিশ্চিত যে প্রশাসক মো. শওকত আলী ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। তাই তাদের অপসারনসহ অন্যান্য অন্যায় ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের অপসারণ চাই আমরা। আর তাঁদের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।

এসময় বক্তব্য রাখেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল হাসান, হাসিবুর রহমান, সরকারি বরিশাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম শোভন প্রমুখ। এদিকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলা এ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সাথে সাধারণ জনতাও অংশ নেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *