মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সবজির বাজার লাগাম ছাড়া। ৮০ টাকার নিচে কোন ধরণের সবজি নেই বললেই চলে। ঘটেছে স্মরণকালের মূল্যবৃদ্ধি।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) শ্রীমঙ্গলের সবজি বাজার ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফুল কপির কেজি ৩৫০ টাকা, শিমের কেজি ৩০০ টাকা, টমেটোর কেজি ২০০-২২০ টাকা, ঝিঙার কেজি ১০০ টাকা, করলার কেজি ১২০ টাকা, বেন্ডির (ঢেঁড়স) কেজি ১০০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, জালি কুমড়ার ৮০ থেকে ১৪০ টাকা, লাউ (কদু) ৭০ থেকে ১৩০ টাকা, পাতাকপির কেজি ১২০ টাকা, মুলার কেজি ৮০ টাকা, কচুর মুখির কেজি ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, জলপাইর কেজি ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, দুই হালি কাঁচা কলার দাম ১২০ টাকা, গাজরের কেজি ১৬০ টাকা, লাই শাকের কেজি ৮০ টাকা, কাচাঁমরিচের কেজি ২৮০ টাকা, কচুর লতির কেজি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, আলুর কেজি বাজার ভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ১২০ টাকা। শাকও নেই পিছিয়ে, মিলেছে দাম বাড়ার দৌড়ে। কচু শাকের আঁটি ৪০ টাকা, লাউর ডগা ৬০ টাকা, পুঁই শাকের আঁটি ৫০ টাকা, কলমি শাক ৩০ টাকা, পদ্মাফুল আঁটি ৩০ টাকা ও লাল শাকের আঁটি ৪০ টাকা।
মাছের বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের আমিষের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখা পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, চাষের কই ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাচকি ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা, ট্যাংরা ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, সিলভার কার্প ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা, কাতল ৩৬০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৯০০ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত এক দুই সপ্তাহ আগেও এসব সবজি ও মাছের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কম ছিলো।
মাংসের বাজারে চড়া দাম। গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০ টাকা। খাসির মাংস প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, এবং দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজার চিত্র ঘুরে দেখার সময় কথা হয় সবজি ক্রেতা রিপন মিয়ার সাথে। সবজির দাম বেশি হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্রেতা রিপন বলেন সব সবজির দামই বেশি। কী রেখে কী কিনবো, সেটা বুঝতে পারছি না। সব সবজির দামইতো প্রায় ৮০ থেকে ১২০ টাকা।
কাওছার ইসলাম নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, বাজারে সবজি ও মাছ কিনতে এসে দাম শুনে কী কিনবেন তা হিসাব মেলাতে পারছিনা। সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। এখন মাছ-মুরগির দামকে ছুঁয়েছে সবজি। কী কিনবো, আর কী কিনবো না, ভাবছি। ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। মিষ্টি কুমড়াও এখন ১০০ টাকার বেশি। এ যে দাম বেড়েছে আমি কিনতে পারছি না। কিন্তু কেন বেড়েছে কাউকে প্রশ্ন করতে পারবো না। জিজ্ঞেস করলেই হাজারো কথা বলবে। কিন্তু সন্তান-পরিবারের কাছে কোনো কৈফিয়ত চলবে না, ব্যাগ বোঝাই করে নিয়ে যেতেই হবে।
দাম বাড়া নিয়ে কথা বলতে দেখে পাশের আরও একজন এগিয়ে এলেন। নাম হিমেল। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বলেন, দেশে এখন যা ইচ্ছে তাই চলছে। তিনি ব্যাখ্যা করলেন, দেখেন না যে যা ইচ্ছা করছে। গরিব মানুষের এখন যত সমস্যা। আয় দিয়ে আর শাক-সবজিও কেনা যাচ্ছে না। কিন্তু টাকা আসবে কোথায় থেকে। সবজির ডিম সবকিছুর দাম বাড়তি।
নতুন বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মোঃ মোজাম্মেল বলেন, বাজারে পণ্যের ঘাটতি রয়েছে। চাহিদামত মালামাল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি বন্যার কারণে সারাদেশেই মালের সংকট। আমরা দাম দিয়ে সবজি কিনে এনে দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
আড়তদারেরা বলেন আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীরা দিগুণ দামে মাল কিনি। পরিবহন খরচসহ সব মিলিয়ে আমরাও হিমশিম খাচ্ছি। বৃষ্টির বন্যার প্রভাবে বাজারে সবজির দাম কিছুটা বেশি।
ক্রেতারা জানান, আগের তুলনায় সরকারের বাজার মনিটরিং কিছুটা কমে যাওয়ায় নানা অজুহাত দেখিয়ে সিন্ডিকেট করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। তাদের দাবি দাম বাড়ার পেছনের আসল কারণ বাজার সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, ন্যায্য মূল্যে পণ্য ও নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চতকরণে মৌলভীবাজার জেলায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আমি পালাক্রমে জেলার সকল উপজেলায় বাজার মনিটরিং ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। গতকাল রাজনগর এবং ধারিবাহিকতা মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলের ডিম ও মুরগের বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছি। বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠারকে জরিমানাও করেছি। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ইতোমধ্যে সারা দেশে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। আগামীকাল এবিষয়ে কমিটির সদস্যদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমেও আমরা মৌলভীবাজার জেলার সকল উপজেলায় বাজার তদারকি অভিযান আরও জোরালো করবো।