বরিশাল প্রতিনিধি ॥  গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ সারা দেশে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলররা আত্মগোপনে চলে যান। ফলে নগরীর উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়ে এবং নাগরিক সেবা বঞ্চিত হন নগরবাসীরা। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের মধ্যে অস্থিরতা এবং নাগরিকসেবা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

এমন পরিস্থিতিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি করপোরেশন শাখার উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে বরিশালসহ বিভাগীয় শহর এলাকার সিটি করপোরেশনের জন্য ২১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করবেন বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনকে পাশ কাটিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) কর্তৃপক্ষ একটি অফিস আদেশে গত ২ অক্টোবর বিসিসির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ৩০ কর্মকর্তাকে ৩০টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেয়। বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাসুমা আক্তার স্বাক্ষরিত এই আদেশের ফলে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নগরবাসীর সেবা দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। এদিকে দায়িত্ব দেওয়া কর্মকর্তাদের এখনও লিখিত আদেশ না দেওয়ার কারণে নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে।

বিসিসির অধীনে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু বিতর্কিত কর্মকর্তার নাম রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে সংশয় রয়েছে যে, এসব কর্মকর্তা কীভাবে নাগরিক সেবা কার্যকরভাবে প্রদান করবেন। এমনকি, দীর্ঘদিন কোনঠাসা হয়ে পড়া করপোরেশনের অনেক কর্মকর্তার মধ্যে দায়িত্ব বন্টন নিয়ে ক্ষোভও দেখা দিয়েছে। তবে দু’একদিনের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানালেও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বিষয়ে কথা বলতে রাজী হননি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাসুমা আক্তার।

বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, প্রথম শ্রেণি পদমর্যাদার বরিশাল সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবিরকে ২০ নম্বর ওয়ার্ড, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মোতালেবকে ২২ নম্বর ওয়ার্ড, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মকসুমুল হাকিম রেজাকে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আবুল বাশারকে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড, নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুখকে ২১ নম্বর ওয়ার্ড, বাজেট কাম হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আ.বা.মো. মশিউর রহমানকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) লুৎফর রহমানকে ৪ নম্বর ওয়ার্ড, পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা দীপক লাল মৃধাকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড, রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদারকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মনজুরুল ইসলাম শুভ্রকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড, ভেটেরিনারি সার্জন ডা. রবিউল ইসলামকে ১ নম্বর ওয়ার্ড, নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. জহিরুল ইসলামকে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দ্বিতয়ি শ্রেনি পদমর্যাদার কাউন্সিলরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী ৩০ নম্বর ওয়ার্ড, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আরিফুর রহমান ৯ নম্বর ওয়ার্ড, সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) অহিদ মুরাদ ২ নম্বর ওয়ার্ড, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. শফিকুল আলম ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) আবুল কালাম আজাদ ২৬ নম্বর ওয়ার্ড, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) এইচ এম কামাল লোহানী ৫ নম্বর ওয়ার্ড, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. মামুন অর রশিদ ১২ নম্বর ওয়ার্ড, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মাহাবুবুর রহমান ২৪ নম্বর ওয়ার্ড, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ড, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পাস) মো. রেজাউল কবির ১১ নম্বর ওয়ার্ড, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (পাস) আনোয়ার হোসেন খান ৩ নম্বর ওয়ার্ড, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পাস) মো. সাঈফুল ইসলাম মুরাদ ২৫ নম্বর ওয়ার্ড, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ছাইদুর রহমান খান ৬ নম্বর ওয়ার্ড, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পাস) মো. আরাফাত হোসেন মনির ১৭ নম্বর ওয়ার্ড, জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আহসান রোমেল ১০ নম্বর ওয়ার্ড, সহকারী হিসারবক্ষন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান ১৮ নম্বর ওয়ার্ড, সহকারী পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মাহাবুব আলম ২৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং কর কর্মকর্তা আজিজুর রহমান ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিরের দায়িত্ব পালন করবেন।

সচেতন নগরবাসী মনে করেন, কাউন্সিলরদের অপসারণ সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। তারা জানাচ্ছেন, সরকারের পক্ষ থেকে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তারা এখন নতুন দায়িত্বে রয়েছেন, যার ফলে নাগরিক সেবা প্রশ্নবিদ্ধ। এই অবস্থায়, নগরবাসী আশা করছেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। তবে জনসাধারণের মধ্যে এখনও সন্দেহ ও উদ্বেগের রেশ রয়ে গেছে।

নগরবাসীর দাবি, সঠিক নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হলে কর্মকর্তাদের নিজেদের কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে এবং দুর্নীতি মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় সরকারের এই পরিবর্তনের ফলে বরিশালের উন্নয়ন কার্যক্রম কিভাবে প্রভাবিত হবে, তা ভবিষ্যতে নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের অন্য ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মতো বিসিসির ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সব কাউন্সিলরকে অপসারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে থমকে গেছে অনেক ধরনের সেবা কার্যক্রম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *