ডিবি অফিসের নাম শুনলে আর কেউ আতঙ্কিত হবে না। ডিবিকে শুধু অপরাধীরাই ভয় পাবে। যতদিন ডিবি প্রধানের দায়িত্ব পালন করবো ন্যায়নীতি, পেশাদারিত্ব ও সততার সাথে ভুক্তভোগী এবং অসহায়দের ভরসাস্থল করা হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক।
ডিবি প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর আজ শনিবার (৫ অক্টোবর ২০২৪ খ্রি.) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ‘মিট দ্য প্রেস’ এ সম্মানিত মহানগরবাসীর উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, যেকোনো ধরনের চাঞ্চল্যকর মামলা উদঘাটন ও অপরাধী শনাক্তকরণের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বা ডিবি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সম্প্রসারিত হয় ডিবি'র কাজের ব্যাপ্তি। যুগের সাথে সমান্তরাল পথে অপরাধের ধরণ যেমন পাল্টিয়েছে, তেমনি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ডিবি'র সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বীয় দক্ষতা ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে ডিবির চৌকস সদস্যগণ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সংঘটিত অপরাধের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটন করে নগরবাসীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রচলিত অপরাধের পাশাপাশি কিশোর অপরাধ, অনলাইন জুয়া, সাইবার ক্রাইম, ইকোনোমিক ক্রাইম, সোশ্যাল মিডিয়া বুলিং, গুজবসহ নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জকে ডিবি আজ সাহসিকতা ও পেশাদারিত্বের সাথে মোকাবিলা করে চলেছে।
তিনি বলেন, ডিবিতে কর্মরত পুলিশ সদস্যগণ রাতদিন নিরলস পরিশ্রম করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের পাশাপাশি ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা অফিসে আর কোনো আয়নাঘর থাকবে না। ডিবি'র কলঙ্কিত অধ্যায় শেষ করে সেটিকে পবিত্র করা হচ্ছে; যেখানে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। এখানে কোনো নায়ক-নায়িকা বা সেলিব্রেটিদের সময় কাটানোর জায়গা হবে না। থাকবে না কোনো ভাতের হোটেল। আসামি যেই-ই হোক না কেন সে ন্যায়বিচার পাবে। গ্রেফতারকৃত আসামিদেরও নির্যাতন করা হবে না। ডিবি অফিসের নাম শুনলে আর কেউ আতঙ্কিত হবে না- আমাদের শুধু অপরাধীরাই ভয় পাবে। আমি যতদিন ডিবি প্রধানের দায়িত্ব পালন করবো- ন্যায়নীতি, পেশাদারিত্ব ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করবো। যারা ভুক্তভোগী এবং অসহায় তাদের কথা শুনবো। তাদেরকে কী রকম আইনগত সহযোগিতা দেয়া যায় সেটি দেখবো। ডিবিকে মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার স্থান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। নতুন স্বাধীন বাংলাদেশে ডিবি অফিস হবে ভুক্তভোগীদের ভরসাস্থল।
ডিবি প্রধান আরো বলেন, ডিবি অফিসে কোনো রকম অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। ডিবিতে চৌকস, দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে ডিবিকে পুনর্গঠন করে ডিবির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে যা যা করণীয় সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশ্বস্ত করে বলতে পারি, সরকার আমাকে যতদিন রাখবেন ততদিন সার্বিকভাবে যে সকল কাজ আইনানুগভাবে হওয়ার কথা আমি সেভাবেই করে যাবো। সাধারণ মানুষ যেন সুবিচার পায়, অন্যায় জুলুম থেকে বাঁচতে পারে সেটি নিশ্চিত করা হবে। এমনকি আমিও আইনের ঊর্ধ্বে নই। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ডিবির কোনো সদস্য যদি কোনো ধরনের অনৈতিক ও অপেশাদার কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হন, তাদেরকেও বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না।
পুলিশ-সাংবাদিক সহযোদ্ধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা একসাথে কাজ করতে পারলে দেশে অন্যায়-অবিচার-দুর্নীতি অনেকাংশেই কমে যাবে। ডিবিকে জনগণের আস্থার জায়গা হিসেবে তৈরিতে আমি সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতা কামনা করছি।
সবাইকে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, কয়েকদিন পরেই হিন্দু ধর্মালম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারাদেশের মতো ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা শহরের প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপের নিরাপত্তায় এবং পূজা উৎসবে পুলিশের পাশাপাশি ডিবির টিম সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে যাতে উৎসবে মেতে উঠতে পারে প্রিয় নগরবাসী।
মিট দ্য প্রেসে তিনি সকলকে আইন ও বিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমাদের সবার প্রিয় শহর ঢাকা। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, কোনো ধরনের অপরাধমূলক কাজে কেউ অংশ নেবেন না। ডিবি সব সময় আপনাদের পাশে আছে। একই সাথে আমরা আপনাদেরও সহযোগিতা কামনা করি। আমাদের উপর আস্থা রাখুন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে আপনাদের নিরাপত্তা ও ঢাকা মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বদ্ধ পরিকর।
বক্তব্যের শুরুতে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন তিনি। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দানকারী বীর শহীদদের, যাঁদের আত্মত্যাগে আমরা নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। গণঅভুত্থ্যানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং একই সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রাণ উৎসর্গকারী নিহত ও আহত পুলিশ সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের অত্যন্ত সংকটকালে আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবির প্রধান হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেছি। ডিবি প্রধানের দায়িত্ব দেওয়ায় তিনি কৃতজ্ঞ চিত্ত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন, বিগত সময়ের উচ্চাভিলাষী ও অপেশাদার কিছু পুলিশ কর্মকর্তা সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। এর ফলে ছাত্র-জনতার আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান এবং বিগত সরকারের পতনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ে। এ ধরণের ভয়াবহ বিপর্যয়ে সম্মূখীন পুলিশ বাহিনীকে পূর্বে কখনো হতে হয়নি। এরূপ পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ বর্তমান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে ডিএমপির ডিবিসহ সকল থানার কার্যক্রম পুরোদমে সচল হয়েছে।
‘মিট দ্য প্রেস’ এ আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভুঁইয়া; যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার-দক্ষিণ) সৈয়দ হারুন অর রশীদ বিপিএম; উপপুলিশ কমিশনারগণসহ গোয়েন্দা বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকগণ ।