চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহীর ক্যারিয়ারের এক যুগ পূর্ণ হয়েছে সম্প্রতি। ২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রং’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে অগ্নিকন্যাখ্যাত এ মডেল-অভিনেত্রীর। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মাহী নানা বিতর্ক জড়িয়েছেন। বেশ কয়েক বছর ধরেই অভিনয়ে নেই তিনি। মডেলিং ও অভিনয়ের বাইরেও মাহিয়া মাহী যুক্ত আছেন রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগের এক সক্রিয় কর্মী তিনি। নেত্রী হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন রাজনীতির মাঠে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন এ চিত্রনায়িকা। নৌকার মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনে হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
কিন্তু এর সবই করেছেন মুরাদকাণ্ডে জড়ানোর পর। অনেকে বলেন, মুরাদকাণ্ডে জড়ানোর পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিয়েও করেন একজন আওয়ামী লীগারকে।
হয়তো ভেবেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা বিয়ে করলে তার সুবাদে তিনি উপকৃত হবেন। তা তো হলোই না, উল্টো বাজে পরিণতি হলো তার। হয়তো মুরাদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু তিনি এটা মনে করেননি যে দলে মুরাদের মতো পার্ভাটেড, দুর্নীতিগ্রস্ত লোক প্রতিপালিত হতে পারে আর যাই হোক সে দলের বেশির ভাগ লোক এমনই এবং এ দলের সঙ্গে যুক্ত হবেন না তিনি। নিশ্চয় ব্যক্তিগতভাবে মাহী সৎ হলে এমনই চিন্তা করতেন। পরে দলটির পতনের পর থেকে যত গল্প একের পর এক জন্ম নিচ্ছে তাতে মাহীও এই গল্পগুলোর কিছুই জানতেন না তা তো হয় না! দলের মন্ত্রী থেকে শুরু করে এমপি, ব্যবসায়ী, নেতা- প্রত্যেকের নামের পেছনেই হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করার খবর।
তাইতো মাহীও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসতে কি না করেছেন! সেই দলের কিছুই তো হতে পারেননি উল্টো এখন নিজের পায়ের তলাতেই মাটি খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কোথাওই খুঁজে পাচ্ছেন না ভরসা পাওয়ার মতো একটু পায়ের তলায় মাটি। কারণ বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আতঙ্কে কাঁটা দিয়ে উঠছে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দেশের শোবিজ তারকাদের। অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন। ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে কয়েকজন তারকার বিরুদ্ধে। ঢাকাই সিনেমার নায়িকা মাহিয়া মাহীও এমন মামলার আতঙ্কে একপ্রকার গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঘনিষ্ঠরা। তবে বিষয়টি নিয়ে মাহী বলেন, ‘আমি কেন ভয়ে থাকব? আমি এমন কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না, যার কারণে আমাকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। আমি সব সময়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আপনারা খোঁজ নিলেই তা জানতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। আপনারা জেনেছেন, বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীরা- ডিজিএফআই, এনএসআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আমার রিপোর্ট ভালোভাবে চেক করেছেন। এরপরই তারা আমাকে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এখন আমার নামে যদি কোনো বাজে রিপোর্ট থাকত, তাহলে কি তারা আমাকে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিত। অবশ্যই না। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি একটি দলকে সাপোর্ট করতেই পারি। তবে সেই দলের হয়ে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত আছি কি না এটা দেখার বিষয়। আমি এটুকু বলতে পারি, আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না, এখনো নেই।’
মাহিয়া মাহী বলেন, ‘মামলা, অভিযোগ যে কেউই করতে পারে। এখন যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা বা অভিযোগ করে- সেখানে আমি কি বলব। যত অভিযোগই আসুক না কেন নিরপেক্ষ তদন্ত হলে আমাকে কেউ অভিযুক্ত করতে পারবে না। কারণ আমি এমন কোনো অন্যায় করিনি।’
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনের আগে দ্বিতীয় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে মাহী আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন নৌকার টিকিটের আশায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু দল তার ওপর ভরসা করতে পারেনি। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েই রাজশাহী-১ আসন থেকে ট্রাক প্রতীক নিয়ে রাস্তায় নামেন। সেখানে নৌকার প্রার্থীর কাছে ভরাডুবি হয়ে নির্বাচনে হেরে জামানত হারান এ অভিনেত্রী। তবুও আওয়ামী লীগের হয়েই কাজ করেন মাঠে। এদিকে নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় প্রভাব পড়ে সংসার জীবনে। বিচ্ছেদ ঘটে দ্বিতীয় সংসারেও। ব্যক্তি জীবনে তিনি এখন একা।
মাহীকে সর্বশেষ দেখা গেছে শাকিব খানের ‘রাজকুমার’ সিনেমায়। যেখানে প্রথমবারের মতো পর্দায় শাকিবের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। নায়িকার নতুন এই অবতার দর্শকরাও লুফে নিয়েছে। পাশাপাশি অভিনয়ের প্রশংসা করেছে।
মাহির উল্লেখ্যযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘দবির সাহেবের সংসার’, ‘পোড়ামন’, ‘অন্যরকম ভালোবাসা’, ‘ভালোবাসা আজকাল’, ‘তবুও ভালোবাসি’, ‘হানিমুন’, ‘অনেক সাধের ময়না’, ‘দেশা দ্য লিডার’, ‘অগ্নি’ ও ‘অগ্নি-২’, ‘কৃষ্ণপক্ষ’, ‘জান্নাত’সহ একাধিক সিনেমা।