বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ঘোষিত র্যালিপুর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয় খুলনায়।
দুপুর থেকেই মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশাত্ববোধক গান, বিপ্লবী সঙ্গীত পরিবেশন জাসাস খুলনা জেলা ও মহানগর শাখার নেতাকর্মীরা। শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীতের পূর্বে কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। র্যালিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে শহীদদের ছবি সম্বলিত প্লাকার্ড ছিল চোখে পড়ার মতো।
নগরীর শিববাড়ী মোড়স্থ জিয়া হলের সম্মুখে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ র্যালি বের হয়। র্যালিটি শিববাড়ী মোড় থেকে লোয়ার যশোর (খান এ সবুর) রোড হয়ে পাওয়ার হাউজ মোড়, ফেরীঘাট মোড়, ডাকবাংলো মোড়, পিকচার প্যালেস মোড় হয়ে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দান, খুলনা জিলা স্কুলের সামনে ঘুরে কে.ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে যেয়ে শেষ হয়। দুপুর গড়াতেই বিভাগের ১০ জেলার বিভিন্ন ইউনিট থেকে আসা বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী-সমর্থকদের মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠে খুলনা মহানগরী।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য যতোটুকু সময় প্রয়োজন এবং সেজন্য যেসব সংস্কার পদক্ষেপ নিতে হবে, সে পর্যন্ত অন্তর্বতীকালীন সরকারকে বিএনপি সমর্থন দেবে।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের জন্য বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করেছে। তাকে ১৬ দিনের হিসেবে বিচার করলে চলবে না। সরকারের পতন হয়েছে, কিন্তু এখনো গণতন্ত্র ফেরত পাই নাই। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজের হাতে না দেয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। এতোদিন শেখ হাসিনার ফ্যাসিষ্ট দোসরদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছি। এখন অদৃশ্য ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করতে বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থকরা প্রস্তুত।
বিএনপি ও তারেক রহমান সম্পর্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা-বার্তা না বলার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, আমাদেরকে বিরোধী দলে ঠেলে দেবেন না। উস্কানীমূলক মন্তব্য করলে দলের নেতাকর্মীরা চুপ করে বসে থাকবে না।
সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার না করার কঠোর সমালোচনা করে সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আপনাদের নামের মামলাগুলো তো প্রত্যাহার করে নিলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধের মামলাগুলো কেনো এতোদিনে প্রত্যাহার করে নিলেন না।
গত ১৬ বছরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পতন আন্দোলনে কি আমরা রক্ত দেইনি? আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী খুন হয়েছে, গুম হয়েছে। বৈষম্যহীন সংস্কারের নামে নতুন করে বৈষ্যমের সৃষ্টি করবেন না। আইন উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবিলম্বে সারাদেশের বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বিএনপি’র বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, জনপ্রশাসন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সূক্ষ্মভাবে আওয়ামী দোসরদের দিয়ে প্রশাসন সাজাচ্ছেন। এর ফল ভালো হবে না। শেখ হাসিনার স্বৈরচারী দোসরদের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলকে ধুলিসাৎ করে নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করে গণহত্যাকারীদের ফিরে আসার পথ সুগম করছেন।
বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুল বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের গেল ১৬ বছরে খুলনার খালিশপুরে বন্ধ সকল পাটকল চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। আওয়ামী স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি’র সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে- যেনো স্বৈরাচারের প্রেত্মারা দেশে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড ও গণহত্যা চালাতে না পারে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারীর পোষ্য ক্যাডার দুর্নীতিবাজ শেখ হাসিনার দোসর খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি’র জাতীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, সংগ্রাম কিন্তু শেষ হয়নি, সকল ষড়যন্ত্রের বিষ দাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করি, এই সরকারের ব্যর্থতা মানে বাংলাদেশের ব্যর্থতা। এই সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠনের দিকে পদক্ষেপ নিতে আহবান জানিয়েছেন।
খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এড. এসএম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অন্যান্যের বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবীব, খুলনা জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন প্রমুখ।