ডেস্ক রিপোর্ট: টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণের ফলে কক্সবাজার শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলেও দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকে। এই দীর্ঘ সময়ের বৃষ্টির কারণে শহরের কলাতলী, প্রধান সড়ক, বাজারঘাটা, টেকপাড়া, বাস টার্মিনাল, কালুরদোকান, বৌদ্ধমন্দির সড়কসহ বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, যা যান চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

শহরের আট লাখ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে এবং বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ৫০ বছরে এমন ভারী বর্ষণ তারা কখনও দেখেননি। কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

পাহাড়তলী বৈইল্লা পাড়ার বাসিন্দা বাবুল বড়ুয়া জানান, টানা বর্ষণের ফলে পাহাড়তলীর তিনটি সড়ক ডুবে গেছে এবং পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবাহিত হয়েছে। ফলে নারী ও শিশুরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, তার এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে, যার ফলে রান্না-বান্না বন্ধ থাকায় হাজার হাজার মানুষ খাবার ও পানীয় জল সংকটে আছেন।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, ভারী বর্ষণের কারণে হোটেল-মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, যা পর্যটকদের চরম দুর্ভোগে ফেলছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী বলেন, জেলা প্রশাসন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার কাজ করছে।

এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ঝোড়ো হাওয়া বইয়ে যেতে পারে এবং কক্সবাজারসহ চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ।

ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের শঙ্কাও বেড়ে গেছে। শুক্রবার ভোররাতে কক্সবাজার সদরের দক্ষিণ ডিককুল এবং উখিয়ার হাকিমপাড়া ১৪ নম্বর ক্যাম্পে পাহাড়ধসের ঘটনায় দুই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *